সাইবার সিকিউরিটি আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনসহ কলোনিয়াল ও নিপিড়নমূলক সকল আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে ফ্যাসিবাদ রিরোধী সাংবাদিকরা। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই’ ফ্ল্যাটফর্মের ব্যানারে নবীন-প্রবীণ সংবাদকর্মীদের মানববন্ধন থেকে গণমাধ্যমের অধিকার ক্ষুন্ন ও বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় এমন ৯টি দাবি উত্থাপন করা হয়। পরে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
দাবিগুলো হলো- ১. গত ১৮ বছরে রাজনৈতিক কারণে বাসসসহ সকল মিডিয়া হাউজ থেকে চাকরিচ্যুত সকল গণমাধ্যমকর্মীকে সসম্মানে পুনর্বহাল করতে হবে। এবং সকল বন্ধ মিডিয়া হাউজ অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।
২. গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাইবার সিকিউরিটি আইন, মানহানি এবং হয়রানিমূলক সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।হামলা-মামলার শিকার সকল সাংবাদিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে নিহত সকল সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পতিত স্বৈরাচার হাসিনার তল্পিবাহক সাংবাদিক নামের কলংক এবং সমাজ ও দেশ ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠির মূল্যবোধ বিরোধী ঘাদানিক চেতনায় বিশ্বাসী এবং শাহবাগি বিষাক্ত মনোভাব পোষণকারীদের বাসসসহ সকল মিডিয়া হাউজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।৫. আগস্টের ঐতিহাসিক পট পরিবর্তনের পর বাসসের শীর্ষপদে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেয়া অযোগ্য ও ঘাদানিক-শাহবাগীদের দোসর ব্যক্তিকে সাংবাদিকরা চান না। এ ব্যাপারে এখনি উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ চাই।
৬. বিগত ১৮ বছরে বাসস থেকে স্বৈরাচারী হাসিনার দোসররা বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করেছে। যার প্রমাণসহ অভিযোগ দুদকে জমা দেয়া আছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে এর সঠিক বিচার ও দোষিদের বাসস থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. সাইবার সিকিউরিটি আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনসহ কলোনিয়াল ও নিপিড়নমূলক সকল আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৮. অবিলম্বে রেডিও-টেলিভিশন-অনলাইন এবং ছাপা পত্রিকার জন্য সমন্বিত ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা ও কার্যকর করতে হবে। এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্য আর্থিক প্রনোদনার ক্ষেত্রে কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
৯. একইনামে ভিন্ন ভিন্ন সাংবাদিক ইউনিয়নের পরিবর্তে সত্যিকারের সাংবাদিকদের নেতৃত্বে গতিশীল ও মিডিয়াবান্ধব ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আখতার হোসেন মাসুদ, সমাজকর্মী মো. শামসুদ্দিন, গণমাধ্যমকর্মী বুরহান উদ্দিন ফয়সাল, কাজী মুস্তাফিজ ও জয়নাল আবেদীন শিশির।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র সাংবাদিক ও বাসসের সাবেক বার্তা সম্পাদক মমতাজ বিলকিস বানু বলেন, “দুঃখের বিষয় হলো, ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী সময়েও আমরা দেখছি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাসসসহ প্রায় সব গণমাধমে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকেই বহাল তবিয়তে রাখা হচ্ছে বা পুনর্বাসন করা হচ্ছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য ও ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে বড় বড় পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
বৈষম্যবিরোধী মোধাভিত্তিক দেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, বাসসে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের নিয়োগ ঠিক এর উল্টো। তার নিয়োগের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাংবাদিক অঙ্গণে চলছে সমালোচনার ঝড়,” বলেন মমতাজ বিলকিস বানু।
জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, “অনেকেই বলছেন বাসসের ইতিহাসে কখনই এমন কম যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় নাই। বাসসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকদের জীবনী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা বয়সের দিক থেকে এবং যোগ্যতায় ছিলেন সচিব পদ-মর্যাদার।”
এক্ষেত্রে, বাসসের নতুন এমডি বাসসে বর্তমানে কর্মরত অনেক সাংবাদিকের চেয়ে পেশাগত যোগ্যতা ও বয়সে অনেক পিছিয়ে আছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিলকিস বানু।