পাওনা আদায়ে গ্রাহক ও ব্যবসায় শীর্ষে থাকা গ্রামীণফোন ও রবি’র সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র টানাপোড়েনে দীর্ঘ মেয়াদে চাপে পড়তে যাচ্ছে দেশর টেলিকম খাত। ধীর গতির ইন্টারনেট ও কলড্রপের পাশাপাশি ৪জি নেটওয়ার্ক বিস্তারও বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যান্ডউইথ ফিরিয়ে দেয়ার পর নতুন করে যন্ত্রাংশ আমদানি, আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার ছাড়ানো এবং ট্যারিফ বা সার্ভিস প্যাকেজের অনুমোদনে অনাপত্তি (এনওসি) না দেয়ায় বিটিআরসি ও এই দুই অপারেটরের মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন এক ঠাণ্ডা লড়াই।
এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন গ্রাহক, অপারেটর ও টাওয়ার ব্যবসায়ীরা। সেবাদানকারী দুই অপারেটরই বলছেন, কিছুদিনের মধ্যেই ইন্টারনেট, ভয়েস ও ডিজিটাল সেবায় বেশ ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন গ্রাহকরা।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের ডাইরেক্টর ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হোসেন সাদাত বলেন, জোরপূর্বক পাওনা আদায়ে এনওসি স্থগিতের সিদ্ধান্ত একটি ক্ষতিকর পদক্ষেপ এবং গ্রাহক স্বার্থের পরিপন্থী। পারস্পরিক আলোচনা এবং সালিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনসম্মত উপায়ে যেকোন মতপার্থক্য সমাধান না করে যে পথে হাটা হচ্ছে তাতে মানসম্মত মোবাইল সেবা প্রদান কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডর চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বিতর্কিত নিরীক্ষা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাবিকৃত অর্থ আদায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রবির অনাপত্তিপত্র (এনওসি) বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে এ সমস্যা সমাধানে সহায়ক নয়।’এ সমস্যার প্রকৃত সমাধান বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি অথবা আলাপ-আলোচনায়। তাই অনাপত্তিপত্র (এনওসি) বন্ধের সিদ্ধান্তে গ্রাহক ভোগান্তিই বাড়বে। কারণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নয়নের নতুন বিনিয়োগ হবে না। ফলে পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি নেটওয়ার্ক পার্টনার, টাওয়ার কোম্পানি, এনটিটিএনসহ আইটি সামগ্রী ও সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সব মিলিয়ে গ্রাহকের ওপর বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আর উভয় অপারেটরই বলেছেন, এনওসি বন্ধের কারণে ইকুইপমেন্ট বা যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যারা ইতোমধ্যে পূর্বে অর্ডারকৃত পণ্য তৈরি করে ফেলেছে তারা সেগুলো সরবরাহ না করতে পারলে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এতে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ থাকবে, এমনকি যে বিনিয়োগের অনুমতি ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে তাও আবার নতুন করে নিতে হবে। অন্যদিকে সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার না কিনতে পারলে নতুন গ্রাহকও নিতে পারবে না তারা।
এদিকে বিটিআরসি’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান অবশ্য গ্রাহক সেবা বিঘ্ন হওয়ার বিষয়ে একমত নন। তিনি বলেন, গ্রাহকরা এখন যে সেবা পাচ্ছেন সেভাবেই পেতে থাকবেন। তাদের সেবায় কোনও বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু অপারেটররা যদি নতুন প্যাকেজ দিয়ে ব্যবসা করতে চান তাহলে পাওনা পরিশোধের কোনও বিকল্প নেই।
আর যদি কোনো গ্রাহক সমস্যায় পড়েন তবে তারা ১০০ নাম্বারে কল করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। গ্রাহকদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে বিটিআরসি এ বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে।