বন্যকবলিত অঞ্চলে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রতিবন্ধকতা জয় করে ডিজিটাল সংযুক্তি সচল রাখতে ভিস্যাট হাব স্থাপনের পাশাপাশি ইতোমধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ মোবাইল টাওয়ার সচল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, চলতি বন্যায় অভাবনীয় চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জসমূহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অত্যন্ত সফলতার সাথে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগ লাগবে এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে সম্ভাব্য সব কিছু করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
মন্ত্রী আজ সোমাবার নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরীতে বন্যার্তদের মাঝে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে এই তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে বিটিআরসি’র হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নেত্রকোনায় ৩৬১টি সাইট ফের সচল হয়েছে। বাকি আছে মাত্র ৯টি। এছাড়াও সিলেটে পুনরায় সচল হওয়া সাইটের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৬১টি এবং সুনামগঞ্জে ৫৪৫টি।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিসের সভাপতিত্বে ত্রাণবিতরনী অনুষ্ঠানে খালিয়াজুরী উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বানী জব্বার, খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ. উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম, মেজর জিসানুল হায়দার, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের বোর্ড মেম্বার লিও জেনসেন এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইসহাক প্রমূখ বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীসহ সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, বানভাসি মানুষের জন্য ত্রাণ অব্যাহত থাকবে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ একজন মহান দেশ নেতা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার জনগণকে এবং গ্রামকে গুরুত্ব দিয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে পুণস্থাপন করে জীবনধারা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। ভিস্যাট হাব স্থাপনের পাশাপাশি ইতোমধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ মোবাইল টাওয়ার সচল করা হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া টেলিফোন একচেঞ্জসমূহ সচল করা হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এসময় বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের জন্য হুয়াওয়ে‘র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
জন্মভূমি খালিয়াজুরীর মানুষদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখানকার মানুষের লড়াই আমি জানি। আমিও লড়াই করেছি। এখানে একটা হাই স্কুল না থাকায় ৫৩ বছর আগে ২৫ কিলোমিটার দুরের স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়া লেখা করতে হয়েছিল। কিন্তু আজকের প্রজন্ম এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পর্যন্ত পেয়েছে। তিনি বলেন, অকাল বন্যারোধে নদী, খাল ও বিল খননে ১৩৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার গ্রহণ করেছে। সাব মার্জিবেল রাস্তার পরিবর্তে হাওরের মানুষের জন্য উড়াল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা শেখ হাসিনা সরকার গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে মধ্যনগর থেকে তাহিরপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উড়াল সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। খালিয়াজুরীতে উড়াল সেতু দিয়ে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী হাওর অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট ও টেলিযোাগযোগ সংযোগ প্রদান করার লক্ষ্যে এসওএফ‘র অর্থায়নে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বানী জব্বার খালিয়াজুরীতে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, মাননীয় মন্ত্রী এই এলাকার সন্তান তিনি জানেন্ এখানকার মানুষের কী প্রয়োজন। তিনি বলেন, অনেক পরিবার আছে বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে ঘর বাড়ি তৈরি করে দেওয়া খুবই জরুরী বলে উল্লেখ করেন ।
পরে উপজেলা চেয়ারম্যান বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
