২০২১ সালে ১৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে গ্রামীণফোন। আগের বছরের তুলনায় এই আয় ২.৫ শতাংশ বেশি। ৫.৩ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ বছর গ্রামীণফোনে যুক্ত হয়েছেন ৪২ লাখ নতুন গ্রাহক। সদস্য বিদায়ী বছরের ৩১ ডিসেম্বর গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৩ লাখ। এদের মধ্যে ৪ কোটি ৪৬ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করেন। শতকারা হিসেবে গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের ৫৩.৫ শতাংশ গ্রাহকই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর এ থেকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হয়েছে ৮.০ শতাংশ।
অপারেটরটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের জন্য প্রতি শেয়ারে ১২.৫ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ প্রস্তাব করেন। এর ফলে মোট লভ্যাংশ দাড়িয়েছে পরিশোধিত মূলধনের ২৫০ শতাংশ, যা ২০২২ সালের মোট কর পরবর্তী মুনাফার ৯৮.৯ শতাংশ (১২৫ শতাংশ অর্ন্তবতী নগদ লভ্যাংশ সহ)। রেকর্ড তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যারা শেয়ারহোল্ডার থাকবেন তারা এই লভ্যাংশ পাবেন, যা ২৬ এপ্রিল ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভার দিন শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করবে।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গ্রামীণফোন ৬৫৪ কোটি টাকা নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও বিস্তৃতিতে বিনিয়োগ করেছে। গ্রামীফোনের মোট নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৮,৩০১। প্রতিষ্ঠানটি কর, ভ্যাট, শুল্ক, ফি, ফোরজি লাইসেন্স এবং তরঙ্গ বরাদ্দ বাবদ ১০,২৮০ কোটি টাকা সরকারি কোষগারে জমা দিয়েছে, যা এর মোট রাজস্বের ৭১.৮ শতাংশ।
এ নিয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, “২০২১ সালে গ্রামীণফোন বেশ কিছু মাইলফলক অর্জন করেছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে আমরা ৮ কোটি গ্রাহকের মাইলফলক অর্জন করি এবং মার্চ মাসে আমরা ১০.৪ মেগাহার্টজ নতুন তরঙ্গ অধিগ্রহণ করি। মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে গ্রামীণফোন দেশজুড়ে এর শতভাগ টাওয়ার সবচেয়ে বিস্তৃত ফোরজি/এলটিই নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত করে। যা গ্রামীণফোনের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এর মাধ্যমে গ্রামীণফোন ক্ষমতায়নে এবং দেশের প্রবৃদ্ধি ও ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। বছরজুড়ে আমরা নেটওয়ার্ক বিস্তার ও তরঙ্গ ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেই, যার ফলে আমাদের গ্রাহকরা আরও উন্নত অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এছাড়াও, কার্যক্রমগত পরিচালন, গ্রাহ-কেন্দ্রিক পণ্য বিন্যাস, আমাদের সেবার ডিজিটালকরণ এবং ডিজিটাল সক্ষমতার ফলে আরও বেশি সংখ্যক গ্রাহক তাদের পছন্দের ডিজিটাল ও টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা হিসেবে গ্রামীণফোনকে বেছে নেন। ৮ কোটি ৩৩ লাখ গ্রাহক নিয়ে আমরা ২০২১ সাল শেষ করি, যা গত বছরের তুলনায় ৫.৩ শতাংশ বেশি। আগের বছরের তুলনায় ডেটা ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.০ শতাংশ বেশি, আগের বছরের তুলনায় ফোরজি ডেটা ব্যবহারকারী বেড়েছে ৭৯ লাখ এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯.৭ শতাংশ।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর সর্বোচ্চ ঢেউ ও পরবর্তীতে লকডাউন দেয়া সহ চলমান বৈশ্বিক মহামারির কারণে এ বছর নানাক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের কর্মী, পার্টনার, অংশীজন এবং স্থানীয় কমিউনিটির রেজিলিয়েন্সের কারণে আমরা নিরলসভাবে আমাদের গ্রাহকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি সেবা প্রদান করতে পেরেছি। আমাদের কৌশলগত লক্ষ্যের অংশ হিসেবে, আমাদের গ্রাহকদের অত্যাধুনিক মোবাইল সেবার পরিবর্তিত চাহিদা মেটাতে আমরা আমাদের রূপান্তরমূলক উদ্যোগ গ্রহণ ত্বরাণ্বিত করেছি ও এর বিস্তৃতি ঘটিয়েছি। পরিচালন মডেল, অটোমেশন একীভূতকরণ, দক্ষতার উন্নতি ও সক্ষমতা তৈরিতে গুরুত্বারোপ করে এ বছর আমরা আধুনিকায়নকে মূল বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছি। দক্ষতা, সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় টুল ব্যবহারের সঠিক সমন্বয় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ধারাবাহিকভাবে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।”
গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ইয়েন্স বেকার (সিএফও) বলেন, “নেটওয়ার্ক ও অভিজ্ঞতা উন্নত করার কারণে বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারী ও ব্যবহারের ফলে ২০২১ সালে গ্রামীণফোনের আর্থিক পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে। মোট রাজস্বে ২.৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ বছর রাজস্ব আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪,৩০৭ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রান্তিকে গত বছর একই সময়ের তুলনায় সাবস্ক্রিপশন ও ট্র্যাফিক রাজস্ব বেড়েছে ৩.৬ শতাংশ এবং ডেটা ব্যবহার বেড়েছে ৪৯.০ শতাংশ।”
তিনি আরও বলেন, “চতুর্থ প্রান্তিকে ইবিআইটিডিএ গত বছরের একই সময় থেকে ২.৬ শতাংশ বেড়েছে, যা পুরো বছরের ১.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে এবং ৬২.৬ শতাংশ ইবিআইটিডিএ মার্জিনে ভূমিকা রেখেছে। পুরো বছরে কর পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩,৪১৩ কোটি টাকা, ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে অনুকূল আর্থিক ও কর ব্যয়ে এককালীন সমন্বয়ের কারণে যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালে নিট মুনাফা মার্জিন দাঁড়িয়েছে ২৩.৯ শতাংশ।”