কোভিড ১৯ মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশেষ করে মোবাইল ইন্টারনেটের কভারেজ ও ব্যবহার বাড়ানোর প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মোবাইল ফোন সংযোগদাতাদের সংগঠন জিএসএম অ্যাসোসিয়েশন।
সরকারের ২০৪১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি আরো বাড়াতে ৪টি বাধা উল্লেখ করে দুইট সুপারিশ করে এবারের বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
এক্ষেত্রে ডিজিটাল অন্তর্ভূক্তিতে উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি মৌলিক নীতি প্রণয়নে অংশীজনদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের পরিবেশকে আরো ঋদ্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যপ্তি বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি ও বিধি বাস্তবায়নের পথে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জিএসএমএ এবং এমটবের যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার এই প্রতিবেদনের ওপরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনা। আলোচনায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সহজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এর সুলভ্যতা এবং ডিজিটাল জ্ঞান ও দক্ষতাকে মূল বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সরকার, নিয়ন্ত্রকসংস্থা এবং মোবাইল শিল্প খাতের স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধিরা এই আলোচনায় অংশ নেন।
জিএসএম কর্মকর্তা রাহুল শাহ এর সঞ্চালনায় সভায় বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সার্বিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন জিএসএমএ এর এশিয়া প্রশান্তমহাসগরীয় অঞ্চলের প্রধান জুলিয়ান গরম্যান।
প্রধান অতিথি হিসেবে বৈঠকে অংশ নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “কোভিড- ১৯ মহামারীতে নাগরিকদের সংযুক্ত রাখতে ডিজিটাল প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরের এই অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সবাই যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যে আমরা মোবাইল শিল্পসহ প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সাথে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাবো। তাদের সঙ্গে নিয়েই দেশের জনগণকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে তা অতিক্রম করবো।
তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালে ৩জি চালু করা অবধি মোবাইল প্রযুক্তি কেবল কথা বলার কাজেই ব্যবহৃত হতো। এরপর ২০১৮ সালে ৪জি চালু হবার পর আমরা প্রকৃত মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করলাম। মাত্র তিন বছরে করোনা থাকার পরও আমাদের মোবাইল অপারেটররা দেশব্যাপী ৪জির সম্প্রসারণ করেছে। এর ব্যবহারের পরিধি বাড়াতে সরকার সকল উদ্যোগ নেবে। বর্তমান সরকারের প্রযুক্তি বান্ধব নীতির ফলে দেশে স্যামসাং ও অপুসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল সেট উৎপাদন করছে। এ সব কারখানায় এখন ফোরজি সেটও তৈরি হচ্ছে। ফলে আমাদের সেট আমদানীর প্রয়োজন নেই।
প্রতিবেদনের বিষয় আলোকপাত করে এমটব সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ফোর-জি কভারেজ এবং ফোর-জি সেবা ব্যবহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফারাক রয়েছে। ফোর-জি ডিভাইসের প্রাপ্যতা ও সামর্থ্য এবং ডিজিটাল দক্ষতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রপ্ত করা সবার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ নিশ্চিত করার জন্য মৌলিক হবে। মোবাইল শিল্পের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার ও ব্যবহার উন্নত করার জন্য তার কাজ অব্যাহত থাকবে। তাই এই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাই।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (এসএস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ, এটুআই নীতি উপদেষ্টা অনির চৌধুরী, গ্রামীণ ফোনের সিএফও এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিন বেকার,টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচলাক মোঃ শাহাবুদ্দিন, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান এবং বিএমপিআইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন এমটব মহাচসিব অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম ফরহাদ।