বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী ধরা পরে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৬ মার্চ থেকে লকডাউনের ঘোষণা আসে। ঘরবন্দি হয়ে পরে মানুষজন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প পরিসরে ঘরে বসে কাজের উদ্যোগ নেয়। যেখানে ইন্টারনেট মূল নায়কের ভূমিকা নেয়।
পরিসংখ্যান বলছে করোনাকালে ঘরে বসে কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেমিনার, মিটিংয়ের ট্রেন্ড চালু হলেও দেশে কার্যত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পায়নি। উল্টো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার কমেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রের দেখা মেলে।
বিটিআরসির তথ্য বলছে, ২০২০ সালের মার্চ শেষে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ১০ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার, যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে বেড়ে হয়েছে ১১ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার।
মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী/গ্রাফিক্স: ডিজিবাংলা
করোনাকালে ১১ মাসে ৯৪ লাখ ৬২ হাজার ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি পেলেও করোনা পূর্ববর্তী অবস্থার তুলনায় মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধির হার কম।
দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ সালে (মার্চ-মার্চ) ইন্টারনেট বৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৯-২০ (মার্চ-মার্চ) সালে ইন্টারনেট বৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যা ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় বেশি। তবে ২০১৯-২০ এর তুলনায় ২০২০-২১ (মার্চ-ফেব্রুয়ারি) সালে ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে আট দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের পরিমান দিনদিন বৃদ্ধি পেলেও করোনাকালে বৃদ্ধির হার কার্যত কমেছে।
বিস্তারিত বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। যা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধির হার/গ্রাফিক্স: ডিজিবাংলা
আইএসপি এবং পিএসটিএন গ্রাহকের ক্ষেত্রেও এমন তথ্যের দেখা মেলে। দেখা যায় দেশে ২০১৮ এর তুলনায় ২০১৯ সালের মার্চে এসে আইএসপি এবং পিএসটিএন গ্রাহক বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। যা গত বছরের মার্চে এসে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৯ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে এই দুই বছরের তুলনায় করোনাকালীন সময়ে এইখাতে গ্রাহক বৃদ্ধির হার ছিল ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম।
আইএসপি এবং পিএসটিএন গ্রাহক বৃদ্ধির হার/গ্রাফিক্স: ডিজিবাংলা
দেশে একই হারে গ্রাহক বৃদ্ধি না পেলেও ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমান বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি প্রাকটিকেলি একই রেটে গ্রোথ হবে সবসময় সেটি হওয়ার কারণ নেই। কারণ, ইন্টারনেট গ্রাহক হওয়ার জন্য যে বয়সসীমা দরকার, যে যন্ত্রপাতি দরকার সেটিরও তো একটি সীমা রয়েছে। আমরা এই সময়কালে দেখেছি ডিভাইসের পেনেট্রেশন সেই হারে বাড়েনি। টুজি সেট নিয়ে তো ইন্টারনেট ইউজ করবে না। ফোরজির এক্সপেনশন (প্রসার) যেভাবে হওয়া দরকার ছিল সেইভাবে হয়নি। ‘
দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশি। তবে মিলছে না কোয়ালিটি সার্ভিস। এই বিষয়ে একমত প্রকাশ করে মন্ত্রী জানান, মোবাইল অপারেটরগুলো কেবলমাত্র স্পেকট্রাম কিনেছে, ফোরজির সম্প্রসারণ হচ্ছে। ফলে এ স্থান থেকে অতিসত্তর উত্তরণ ঘটবে। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তুলনামূলক বৃদ্ধি না পেলেও বেড়েছে ব্যান্ডউথের দ্বিগুণ ব্যবহার।
করোনাকালে পিএসটিএন এবং আইএসপি গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও করোনা পূর্ববর্তী অবস্থার তুলানয় বৃদ্ধির হার কমার বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি এম এ হাকিম।
তিনি বলেন, করোনাকালে পিএসটিএন এবং আইএসপি গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া স্বভাবিক। কারণ যাদের ইন্টারনেট কানেকশন দরকার তারা তো নিয়ে ফেলছে। ধরা যাক মার্কেটে ১০০ জনের ইন্টারনেট কানেকশন দরকার। তাদের মধ্যে ৮০ জন নিয়ে ফেলছে। ফলে আনুপাতিকহারে সেইভাবে ইন্টারনেট কানেকশন বৃদ্ধিপাবে না।
করোনাকালে গ্রাহক বৃদ্ধির ফলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে এইখাতে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে। প্রথম দিকে ডিভাইস সঙ্কট থাকলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ সঙ্কট থেকে কিছুটা উত্তরণ করা গেছে বলে জানান তিনি।