সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ৪২ ধারা পুরোপুরি বাতিল এবং ২১,২৫, ২৮, ২৯ এবং ৩২ ধারার সংজ্ঞা সুনির্দিষ্টকরনের সুপারিশ করেছে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (টিআরএনবি)। অপরদিকে সংশোধন, পরিমার্জন নয় বিদ্যমান আইন বাতিল করে নতুন করে করার দাবি জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদেরা। তারা ক্লাউড সিস্টেম, ডেটা মানেজমেন্ট, ডেটা ট্রান্সমিশন, ডেটা অপারেটিংয়ের মতন সিস্টেম ও প্লাটফর্মে দেশীয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা করার সুপারিশ করেছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর ব্রাক সেন্টার ইন-এ অনুষ্ঠিত সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এই দাবি জানানো হয়। সভায় মূলপ্রবন্ধে ফেসবুক-কে ‘সার্ভিলেন্স টুল অব ইউএসএ’ অভিহিত করেছেন টিআরএনবি’র প্রাক্তন সভাপতি রাশেদ মেহেদী। তিনি বলেছেন, ফেসবুক, গুগলকে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বলে মনে করার কিছু নেই। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভিলেন্স টুল।
টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের সভাপতি সমীর কুমার দে’র সঞ্চালনায় গোল টেবিলি আলোচনায় মুখ্য আলোচক ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী।
আলোচনায় প্রযুক্তি বিশ্লেষক সুমন আহমেদ সাবির বলেছেন, ক্রসবর্ডার অপরাধ দমন করার জন্য দেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন কোনো কাজে আসবে না। এই আইন দিয়ে বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।
বেসিস সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, বাকস্বাধীনতায় ভারসাম্য রক্ষায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য স্কুল থেকেই গঠনমূলক সমালোচনা করার সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। এভাবেই সেলফ সেন্সরশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর
,চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম সাইবার নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন কন্টেন্ট ব্লক করার জন্য এনটিএমসিকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের নাম পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করে সমস্যার সমাধান হবে না। এটা পুরোপুরি বাতিল করতে হবে, নতুন করে তৈরী করতে হবে।
এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার নতুন আইন করার ক্ষেত্রে অপরাধকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে উপধারাগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ রাখতে হবে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। অপরাধ সনাক্ত করণে বিচারকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।
বিডি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাত খুবই ঝুঁকি প্রবন। প্রতিদিন দেশের আর্থিক খাতে ৬৩০টি সাইবার আক্রমণ হয়। তাই সাইবার অপরাধ কীভাবে ঘটে তা নির্ধারণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ঠিক করতে হবে। ডেটাসুরক্ষা আইন করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকর ভাবে সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার তথা ছক বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি ম্যানেজড ছক গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে দেশে কোন তথ্য রাখা বাধ্য করতে হবে তা নির্ধারণ করা দরকার।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই নাবিল বি আরিফ বলেন, সাইবার নিরাপত্তার আইনে শাস্তি নয় সুরক্ষাকেই গুরুত্ব দেয়া দরকার। সাম্প্রতিক সময়ের দুর্ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সামালোচনার জন্য যে ধরনের কাণ্ড ঘটেছে তা দুঃখজনক। এটা আইনের কাজ নয়। তাই আমাদের আইনের ভাষা পরিচ্ছন্ন ও বোধগম্য হতে হবে। মানুষের নিরাপত্তাকেই সবার ওপরে গুরুত্ব দিতে হবে যেন তারা ভীত না হন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, অপরাধের ধরন অনুযায়ী অপরাধের ক্ষত তৈরি হয়। এজন্য বিচার বিভাগীয় তদারকি থাকা দরকার। ফেসবুক পোস্ট কন্টেন্ট সংশ্লিষ্ট অপরাধ। এটাই সব নয়। তাই বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ সাইবার সুরক্ষা আইনে প্রাধান্য পাওয়া উচিত নয়। এজন্য আমাদের ছাত্র-শিক্ষক-ব্যাবসায়ী-জনতার অংশগ্রহণে এই আইন করা দরকার। তা না হলে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
আনোয়ার টেকনোলজি’র কো-ফাউন্ডার ও তরুণ উদ্যোক্তা ওয়াইজ আর হোসেন বলেন, আমরা ডিজিটাল পরিবেশের মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি। আইনে তরুণদের সুরক্ষা না থাকলে আমরা ঝুঁকিতে পরবো। কেননা, সাইবার ক্রাইমের মধ্যে বাক-স্বাধীনতা, অনলাইন হ্যারাজমেন্ট, সাইবার বুলিং ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণদের পাশাপাশি, নাগরিক ও ব্যবসাকেও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।