টানা দশ দিন পর রবিবার বিকেল থেকে চালু হচ্ছ মোবাইল ইন্টারনেট। চালু হওয়ার পর থেকেই তিন দিনের জন্য ৫ জিবি ইন্টারনেট ফ্রি পাবেন। আর ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার বিটিআরসি থেকে এদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি’র সম্মেলন কেন্দ্রে মোবাইল ইন্টারনেট ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এসময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, গত ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ থাকার পর আজ বিকেল ৩টার পর থেকে মোবাইল ৪জি নেটওয়ার্ক চালু করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে এই সময়ে যে গ্রাহকেরা মোবাইলে ইন্টারনেটে যুক্ত হবেন তারা তিন দিনের জন্য ৫জিবি বোনাস ডেটা পাবেন।
এর আগে বৈঠকে এনটিএমসি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য, এমএফএস সল্যুশন বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়, গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, রবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব শেঠী, বাংলালিংকের সিইও এরিক অস ও টেলিটকের মোবাইল অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সিটিওরা এই বৈঠকে অংশ নেন।
সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ কখনোই ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। পাবলিক কি ইনফ্রাসট্রাকচারগুলোতে (পিকেআই) ইন্টারনেট ছিলো না। বাংলাদেশ কখনোই এক মহুর্তের জন্য বিশ্ব থেকে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়নি। আমি প্রকৃত তথ্য জানাতে ফেসবুক সচল রেখেছি। আমরা কোনো অ্যাপ বন্ধ রাখার পক্ষে নই। আমরা কোনো অ্যাপ বন্ধ করিনি। বিশ্বের মানবাধিকারের প্রবক্তা, মোড়লরাই তাদের দেশে এসব করেছে। আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার যেসব দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে সমালোচনা করছে তারা নিজের দোষ ও অপরাধ বিবেচনাই নিয়ে উপদেশ দিলে সেসব বিবেচনায় নেয়া হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রযুক্তিতে অন্যতম উদার দেশ। এখনো আমরা উদার নীতি অনুসরণ করছি।
উদ্যোক্তারা যেনো নিজেদের এফ-কমার্স, টুইটার কমার্স, এক্স কমার্স, ইন্টাগ্রাম কমার্স উদ্যোক্তা না হয়ে যেনো নিজেদের নিজস্ব ডোমেইন ও প্লাটফর্ম তৈরি করে ডিজিটাল উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। এতে করে তাদের ব্যবসায় সবসময় থাকবে। দেশে-বিদেশে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে পাবেন।
ডিপটেক কোম্পানিগুলোর প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতার আহ্বান জানিয়ে পলক বলেছেন, গতকাল ফেসবুক, টিকটক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তাদের জবাব দিতে ৩০ জুলাই সময় দেয়া হয়েছে। দেশের সংবিধান ও আইন না মানায় এই চিঠি জানিয়ে পলক বলেন, আমরা যে কন্টেন্টগুলো মুছতে বলেছি তার খুব কমই তারা মুছেছে। উগ্রপন্থীদের পেজ চালু থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৫০টি পেজ টেকডাউন করে দিয়েছে।
মোবাইল ইন্টারনেট চালুর পর সময়ে সকল অ্যাপই চালু থাকবে। কিন্তু ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটকের মতো অ্যাপগুলো মোবাইল ইন্টারনেটে ফ্রি থাকবে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি। তবে ভিপিএন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে পলক বলেছে, আগামী ৩১ জুলাই বিটিআরসি-তে ফেসবুক, টুইটার ও হেয়াটসঅ্যাপের প্রতিনিধরা আসবেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সোশ্যাল মিডিয়া চালু বিষয়ে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়। সরকার ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করে, যা সময়-সময় শিথিল রেখে এখনো বলবৎ রয়েছে। কারফিউর আগেই ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করায় দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরের দিন ১৮ জুলাই রাত পৌনে নয়টা থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো দেশই ইন্টারনেট-বিচ্ছিন্ন ছিল।
পাঁচ দিন ইন্টারনেট-বিহীন থাকার পর ২৩ জুলাই রাতে সীমিত পরিসরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। পরদিন ২৪ জুলাই সারা দেশেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়; যদিও ইন্টারনেট সেবা এখনো আগের মতো স্বাভাবিক নয়। মোবাইল ইন্টারনেট এখনো বন্ধ।