দুই দশক পর হালনাগাদ খসড়া টেলিকম আইনটি বিনিয়োগ বান্ধব ও প্রয়েগযোগ্য হওয়া দরকার বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এই আইন যেন প্যানালটি নির্ভর না হয়ে বাস্তবায়নযোগ্য এবং সহনশীল এবং অন্তর্ভূক্তি ও সমন্বয় সুবিধার মাধ্যমে বিদ্যমান বিপত্তি কমায়। কিন্তু আইনের খসড়ায় নিয়ন্ত্রক কমিশন বিটিআরসি’র স্বাধীনতা হরণ এবং সোশ্যাল মিডয়ার ব্যবসার বিষযটি যথাযথভাবে সঙ্গায়িত হয়নি। অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি এআই এর মতো সর্বশেষ প্রযুক্তি। ভিন্ন ভিন্ন গাইড লাইনের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
বুধবার রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি বৈঠক খানায় স্মার্ট বাংলাদেশ যাত্রায় নতুন আইন নিয়ে অনুষ্ঠিত গোরটেবিল আলোচনায় এমনটাই জানিয়েছেন বক্তারা।
আলোচনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুর অব ল এর অধ্যাপক সাইমন রেজা তালুকদার বলেছেন, আইনে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ডিজিটাল সেবা, ডেটা, জরিমানার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিষয় নজরে আনা হয়নি। আরবিট্রেশনের সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ না থাক ও দায়মুক্তি এই আইন রুলস অব ল’র পরিপন্থী।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আজকের উন্নয়নে টেলিকমের অসামান্য অবদান রয়েছে। আমরা মনে করি সংশোধিত টেলিকম আইনটি হবে সময়োপযোগী, উদার, বিশ্বর সেরা আইনের বেস্ট প্রাক্টিসের মাধ্যমে ভবিষ্যতমুখী ব্যাবসা বান্ধব ও নাগরিক বান্ধব। এজন্য এই আইন নিয়ে আজ যে প্রস্তাবনা এসেছ তাতে কোনো মতবিরোধ নেই।
তিনি বলেন, লঘুপাপে গুরুদন্ড জরিমানা, প্রতিষ্ঠান প্রধানের অজামিনযোগ্য শাস্তির বিধান রদসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিারসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমদ, এমটব সভাপতি ইয়াসির আজমান।
এছাড়াও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে মোবাইল অপারেটর ও আইএসপি ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিটিারসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আইন মানুষের জন্য। আমি ক্ষমতা নয়, দায়িত্বে বশ্বাসী। তবে দায়িত্ব পালন করতে চাই নির্ভয়ে। এটা মিলিটারি শাসন নয়। স্বার্থ রক্ষা করে মানুষের সেবা দিতে চাই।
এমটব সভাপতি ইয়াসির আজমান বলেন, আমরা আশা করি, এই আইনটি হবে একইসঙ্গে নাগরিক, রাষ্ট্র ও ব্যবসায় বান্ধব।
ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারী ও শিশুদের এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, এই আইনের অজামিনযোগ্য ধারা, জরিমানার ভার ও শালিসি ব্যবস্থা রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে একটি একটি স্মার্ট টেলিকম অ্যাক্ট করা হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান মো: আমিনুল হক টেলিযোগাযোগ আইন ২০২৪ খসড়া নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে জানান, আইনে অশ্লীল কনটেন্ট আদান প্রদানের লঘুদণ্ড এবং টেলিফোনে আড়িপাতার মতো বিষয়কে হালনগাদ করা এবং ই-কমার্স ও ওটিটির মতো স্মার্ট সেবা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে নতুন ৯টি ধারণা। পথাধিকার ধারায় টেলিকম সংযোগ সম্প্রসারণে যে কোনো জমি ব্যবহার সুবিধা যুক্ত হলেও কার্যক্রম না থাকা ৬টি ধারা বিলুপ্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রবির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, ভিওআিপি ও তরঙ্গ বিষযক আইন বাস্তবায়ন সহজ নয়। এই আইনে আমরা আইসিটি উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গীর প্রকাশ দেখছি না।
এমটব এর পক্ষ থেকে দেয়া উপস্থাপনায় একগুচ্ছ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে টেলিকম ব্যবসায়ীদের সহজ প্রস্থানের সুযোগ এবং একীভূত করণের সহজ পথরেখা অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। আইনটি যেন দীর্ঘসূত্রিতামুক্ত এবং সহজ নির্দেশনামূলক হয়। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যবসায় উদ্যোক্তা বান্ধব হয়। ঝুলে থাকা ওটিটি ও সোশ্যাল মিডিয়া নীতিমালাটি আলোর মুখ দেখতে পারে সেজন্য টেকসই গাইডলাইন ও লাইসেন্স নীতিমালা থাকা দরকার।
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আইনে লাইসেন্স নবায়নে বিটিআরসি থেকে মন্ত্রণালয়ে না পাঠানো হয়। একইভাবে আইনটি সংশোধন যেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বান্ধব এবং শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজ হয়। ৩৬৫ টাকায় আইএসপিদের জন্য আইআইজি ব্যান্ডউইথ ট্যারিফ বেঁধে দেয়া হয় , কিন্তু মার্কেট ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, এটা রেভেনিউ শেয়ারিং আইন না মানতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, আমরা চাই প্রাইস ওপেন থাকুক, একে অপরের সাথে কম্পিট করে বিজনেস করুক।
এমওআইবি সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ বলেন, দেশ মোবাইল উৎপাদনে গাইডলান দিয়ে চলছি। এটি অমাদের একটি অরক্ষিত বোধ করছি। দুশ্চিন্তায় নাকাল অবৈধ পণ বিক্রি। তাই এই আইনে এসব বিষয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হোক।
টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পািন ইডটকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যনেজিং ডিরেক্টর সুনীল আইজ্যাক বলেন, আমরা চাই আইনে টাওয়ারকে ক্রিটিক্যাল অবকাঠামো হিসেবে গণ্য করা হোক। একইসাথে বিদ্যুত প্রাপ্তি সুলভ ও সহজ করা হোক। টওয়ার কো কে জাতীয় অবকাঠামোকে পরিবেশবন্ধব করতে প্রণদনা দেয়া এবং বিনিয়োগ বান্ধব করার দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের সিওও হ্যান্স মার্টিন, বাংলালিংক এর চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, টেলিটক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মামুদ চৌধুরী ফাইবার অ্যাটহোম পরিচালক আব্বাস ফারুক, সামিট কমিউনিকেশনের চিফ আর্কিটেক্ট অফিসার ফারুক ইমতিয়াজ, নগদ ভাইস প্রেসিডেন্ট সজল জাহিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সজল জাহিদ বলেন, আইনে বিধিমালা নিয়মিত আপডেট করে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সহজ হবে। এজন্য বিটিআরসিকে নিয়ন্ত্রণের চেয়ে স্বাধীন ও দায়িত্বশীল হবে।
Very interesting subject, regards for posting.Raise your business