টেলিযোগাযোগ খাতের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং সর্বস্তরে ফাইভজিসহ পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের তিন মোবাইল অপারেটর (গ্রামীণফোন লিমিটেড, রবি আজিয়াটা লিমিটেড এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড) এর অনুকূলে প্রযুক্তি নির্বিশেষে একক (Unified) লাইসেন্স হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক।
“Regulatory and Licensing Guidelines for Cellular Mobile Services in Bangladesh” গাইডলাইনের আলোকে অপারেটরদের অনুকূলে (ক) Cellular Mobile Services Operator License ও (খ) Radio Communications Apparatus License for Cellular Mobile Services শীর্ষক একীভূত (Unified) লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়েছে। এর ফলে পূর্বের 2G, 3G, 4G প্রযুক্তি এবং তরঙ্গ ফি এর জন্য আলাদা লাইসেন্স এবং নির্দেশিকা পরিবর্তে সব বিষয়কে এক লাইসেন্সের আওতায় আনা হয়েছে। একীভূত লাইসেন্সে 5G’র ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অ্যাকসেস তরঙ্গের প্রাপ্যতা ও ব্যাকহল ফাইবারের পাশাপাশি পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহারের অনুমতি, অফশোর ক্লাউড সুবিধা, রোল আউট বাধ্যবাধকতা, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা প্রভৃতি বিবেচনায় নেওয়া হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ হতে “Regulatory and Licensing Guidelines for Cellular Mobile Services in Bangladesh” গাইডলাইনটি অনুমোদিত হওয়ার পর বিটিআরসি হতে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে তা জারি করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেলিকম খাতে যত পরিবর্তন ও উন্নয়ন তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নের্তৃত্বে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ এর দিকনির্দেশনা ও পরামর্শে হয়েছে। বিটিআরসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে বর্তমানে টেলিযোগাযোগ খাতে ১৯ কোটি মোবাইল গ্রাহক এবং প্রায় ১৩ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একীভূত লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্তে টেলিযোগাযোগ খাতে ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে । অপারেটররা আগামীতে গ্রাহককে উচ্চগতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করতে পারবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহুমাত্রিক সেবা প্রদানের সুযোগ থাকায় অপারেটরগুলো তাদের বিনিয়োগের সুফল পাবে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণও বাড়বে। ভয়েস কলের পাশাপাশি ডাটার ব্যবহার বাড়ছে জানিয়ে অপারেটরদেরকে ডিজিটাল প্রোডাক্ট চালুর পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী।
আধুনিক প্রযুক্তিগত সেবা সহজ ও সুলভে গ্রাহকের নিকট পৌছানোর পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির জন্য অপারেটরদেরকে আলাদা লাইসেন্স প্রদান করতে হবে না জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌঃ মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বর্তমানে এতটাই বিস্তৃতি লাভ করেছে যে দেশে প্রতিনিয়ত মোবাইল সংযোগ ও ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, ফাইভজি প্রযুক্তি বাস্তাবায়নের জন্য ইতোমধ্যে অপারেটরদের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং একীভূত লাইসেন্স প্রদানের ফলে ফাইভজিসহ নতুন প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানে জটিলতা থাকবে না। একীভূত লাইসেন্সের আওতায় যে সকল সেবা প্রদানের সুযোগ রয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলোকে তা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করার আহবান জানান তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, ফাইভজি এবং পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল সেবা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একীভূত (Unified) লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ পর্যাপ্ত তরঙ্গ ও একসেস ফ্রিকোয়েন্সি সহজলভ্য হয় সে লক্ষ্যে বিটিআরসি কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
একীভূত লাইসেন্স দেশের সকল টেলিকম অপারেটরদের জন্য একটি বড় অর্জন বলে মন্তব্য করেন গ্রামীণফোন লিমিটেডের গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান।
একীভূত লাইসেন্স প্রদানের ফলে অপারেটররা তাদের পছন্দ অনুযায়ী সব ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজে টেলিকম সেবা দিতে পারবে জানিয়ে রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, একীভূত লাইসেন্স টেলিকম খাতে মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নতুন লাইসেন্সিং গাইডলাইন প্রণয়নের পর দ্রুত তা অপারেটরদের নিকট হস্তান্তর করায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.কে.এম হাবিবুর রহমান।
বিশ্বের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক ও প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো 5G প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং অধিক নির্ভরযোগ্য ও নিম্নতর বিলম্বের নেটওয়ার্ক তৈরির ধারণাগুলোর প্রায়োগিক দিকসমূহ বিবেচনায় নিয়ে বহুমুখী সেবার বাণিজ্যিক বাস্তবায়নে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশেও 5G প্রযুক্তির সেবা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে ২.৩ গিগাহার্জ, ২.৬ গিগাহার্জ ও ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড ৩টি নির্বাচন করেছে। গত ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখে ২.৩ গিগাহার্জ ব্যান্ড হতে ৭০.০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ এবং ২.৬ গিগাহার্জ ব্যান্ড হতে ১২০.০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ ৪টি মোবাইল অপারেটর এর অনুকূলে নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ প্রদান করা হয়, যা বর্তমানে ৪জি সেবা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো 2G লাইসেন্স নামে বাণিজ্যিকভিত্তিতে সেলুলার মোবাইল সেবা সংক্রান্ত লাইসেন্স প্রদান করা হয়, যা ২০১১ সালে ১৫ বছরের জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত নবায়ন প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালে চার মোবাইল অপারেটরকে ২০২৮ সাল মেয়াদ পর্যন্ত 3G লাইসেন্স প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চার অপারেটরে অনুকূলে 4G লাইসেন্স প্রদান করা হয়। বর্তমানে উক্ত লাইসেন্সসমূহের আওতায় দেশে সেলুলার মোবাইল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌ: শেখ রিয়াজ আহমেদ, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার মো: আমিনুল হক, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উধ্বর্তন কর্মকর্তা, কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকগণ এবং মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
