ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন শোকের দিন; তেমনি গর্বের দিনও। এদিন আমরা বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করেছি একুশ মানে মাথা নত না করা। আমরা অদম্য জাতী তা আমরা বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করেছিলাম। আজকের একুশ শতকের একুশে এসে প্রতিটি কাজে কর্মে বিশ্বের সকল বিপজ্জনক ও নোংরা কাজ রোবট করে দিচ্ছে। এতে মানুষের কর্মসংস্খান হুমকীতে পড়ছে। আগের সেবা ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের কাজ সহজ করলেও তাকে অলস বানাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সাইবার নিরাপত্তা ধীরে ধীরে ব্যক্তি, সংগঠন, পরিবার এমনকি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকী হয়ে উঠছে। তাই আমাদের বর্তমান সমস্যা ও সঙ্কট মোকাবেলায় কীভাবে আমরা আমাদের মেধা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবো তা নতুন করে ভাবতে হবে।
বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষা শহীদ স্মরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বাংলা ভাষাভিত্তিক তিনটি সফটওয়্যার বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ‘উচ্চারণ’, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট ‘কথা’ এবং বাংলা ওসিআর ‘বর্ণ’ -সহ নতুন একটি বাংলা ফন্ট ‘পূর্ণ’ উন্মুক্ত উনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিটক যেন বাংলালিংক এর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে সেজন্য শিগরিরই নেটওয়ার্ক ‘অ্যাক্টিভ শেয়ারিং’- এ যাবে বলে জানান তিনি।
পলক বলেন, টেলিটক-বাংলালিংক ও বিটিআরসি এরই মধ্যে বিষয়টি পরীক্ষায় সফল হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই অ্যাক্টিভ নেটওয়ার্ক শেয়ার উদ্বোধন করা হবে।
২০৪১ সালের আত্মনির্ভরশীল স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের তরুণরা প্রস্তুত উল্লেখ করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ভবিষ্যতে নিজেদের গুগল, ফেসবুক করতে হলে শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না। একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। আজকে দেশেই এসব সফটওয়্যার তৈরি করে সে দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। এই পদক্ষেপের ফলে প্রযুক্তিতে বাংলা সমৃদ্ধ করণ প্রকল্প আগামী দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর সেবা, নতুন ধরণের সার্চ ইঞ্জিনের ফাউন্ডেশন হিসেবে কাজ করবে। এ বিষয় গত ৫ বছরে ততটা আশাবাদী ছিলাম না। তবে এখন আমাদের উদ্ভাবক ও গবেষক, ছাত্র-ছাত্রী ও উদ্যোক্তারা এই প্রকল্পটিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে- আমি এখন খুবই আত্মবিশ্বাসী। আগামীতে প্রযুক্তির উদ্ভবক হিসেবে বিশ্ব আমাদের চিনবে।

আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন প্রতিটি সংস্থাকে লাভজনক করার যে অঙ্গীকার সরকার করেছেন তার অধীনে পদক্ষেপ হিসেবে অনুষ্ঠানে বিটিসিএল এর গ্রাম পর্যায়ে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবার জন্য জিপন থেকে সুলভ ও ভাষা প্যাকাজ এবং টেলিটক এর ই-সিম উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।
পলক জানান, বিটিসিএল এর ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ জিপন এর বিশেষ সাশ্রয়ী প্যাকেজের আওতায় ৫ এমবিপিএস এর বিদ্যমান মূল্যে ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে, ৩৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন সাশ্রয়ী এই প্যাকেজের আওতায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউডথ পাওয়া যাবে ৫০০ টাকায়। ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেটের বিদ্যমান মূল্য ৮০০ টাকা। এখন থেকে ১৫ এমবিপিএস পাওয়া যাবে ৮০০ টাকায়। ১৫ এমবিপিএস বিদ্যমান মূল্য ১০৫০ টাকা, এখন থেকে সমপরিমান টাকা অর্থাৎ ১০৫০ টাকায় পাওয়া যাবে ২০ এমবিপিএস।বিদ্যমান মূল্যে ২০ এমবিপিএস এর দাম ছিলো ১২৫০ টাকা। বিদ্যমান মূল্যে ২৫ এমবিপিএসের দাম ১৪৫০ টাকা। ২৫ এমবিপিএস এর পরিবর্তিত প্যাকেজ মূল্য ১৩০০ টাকা। ৩০ এমবিপিএস এর বিদ্যমান মূল্য ১৬৫০ টাকা। পরিবর্তিত মুল্য নির্ধারিত করা হয়েছে ১৫০০ টাকা। ৪০ এমবিপিএস এর মূল্য ২০৫০ টাকা, পরিবর্তিত মূল্য ২০০০ টাকা। ৫০ এমবিপিএস এর বিদ্যমান মূল্য ২৪৫০ টাকা্, পরিবর্তিত দাম রাখা হয়েছে ২৪০০ টাকা। এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ই-সিম হলো এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল। এটি ফিজিক্যাল সিম কার্ডের মতো নয়। এটি ফোনে ইনস্টল করা ভার্চুয়াল সিম, যেটি কোন মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষীয় সফটওয়্যারের সহায়তায় মোবাইল নম্বর বরাদ্দপূর্বক অনলাইনে সক্রিয় করা হয়। ই-সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বারবার খোলার ঝামেলাই যেহেতু নেই, তাই এ সিম নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া একই সঙ্গে একাধিক নম্বর ব্যবহার করা যায়। ব্রান্ডভেদে একসঙ্গে এক ফোনে পাঁচটি পর্যন্ত ই-সিম ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ই-সিমের ব্যবহার বেড়ে হবে ৩.৪ বিলিয়ন।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহি পরিচালক রণজিৎ কুমার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো: সামসুল আরেফিন,বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌ: মো: মহিউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এর আগে পুস্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে অমর ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রতিমন্ত্রী। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব এবং আইসিটি বিভাগের সচিব সহ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তর ও সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।