৫জি’র জন্য নেয়া প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন রাষ্ট্রীয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী। বিটিসিএল এর মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ৫জি উপযোগী করণে বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে আহ্বান করা দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগে এই বরখাস্তাদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বরর ২০২৩) এই নির্দেশনা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।
আদেশ অনুযায়ী, কারিগরি প্রতিবেদন অনুমোদনকারী হিসেবে আর্থিক বিভাগের আর্থিক ক্ষমতা অর্পন অনুযায়ী অনুমোদন কর্তৃপক্ষ না হয়েও এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে দরপত্র বাতিল,কারিগরি প্রতিবেনে স্পষ্ট বিচ্যুত বিষয় সংশোধনে ২১৩তম সভায় দেয়া পরামর্শ প্রতিপালন না করা এবং সরকারি কর্মচারি বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে তাকে এই শাস্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, দরপত্রে সাড়া দিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠান এক ধাপ দুই খাম বিশিষ্ট দরপত্র দাখিল করে। পিপিআর ২০০৮ এর বিধি অনুসারণ করে বিটিসিএল এর পরিচালনা পর্ষদ সাত সদস্যের মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। প্রাথমিক ও কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তিনটি দরপত্রকেই যোগ্য বিবেচনায় নিয়ে গত ৬ এপ্রিল চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেয়। এরপর বিটিসিএল এর ২১৩তম বোর্ড সভায় অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান চৌধুরী নিজেই ২টি কোম্পানিকে রেসপনসিভ হিসেবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু কারিগরি মূল্যায়নে সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি সব কয়টি দরপত্র বাতিল করেন। এরপর পিপিআর ২০০৮ -এ বর্ণিত সময়সীমা ১৫ দিন না মেনে ৫৫দিন পরে ১ জুন পুণঃদরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত দেন।
অভিযোগ রয়েছে, একটি পক্ষ কাজ বাগিয়ে নিতে দরপত্র বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর এর বলি হলেন বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সূত্রমতে, টিসিএলের ফাইভজি রেডিনেস প্রকল্পটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন করে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য ৪৬০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজের দরপত্র গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল ২ নভেম্বর। ২০ ডিসেম্বর দরপত্র খোলার পর দেখা যায়, নকিয়া, জেডটিই ও হুয়াওয়ে এই তিন প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।
এরপর পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল) নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পের আহ্বায়ক আজম আলী কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকল্প পরিচালক মো. মঞ্জির আহমেদের কাছে জমা দেন। পরে বিটিসিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামানের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন প্রকল্প পরিচালক। তবে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাফতরিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি। পিপিআরে প্রতিবেদন গ্রহণ করার এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্রের ফলাফল ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও দরপত্রের আর্থিক প্রতিবেদন খোলার ক্ষেত্রও কালক্ষেপণ করার অভিযোগ রয়েছে।
এদিবে বিটিসিএল গত ১৩ জুন তিনটি কোম্পানিকে লিখিতভাবে দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। ১৯ জুন টেলিযোগাযোগ বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে দরপত্র নতুন করে আহ্বান করতে হবে। এর মধ্যেই মূল্যায়ন প্রতিবেদন কবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এসেছে, তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন অনুমোদনে দেরি করায় বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে গত ১৬ মে চিঠি দেয় হুয়াওয়ে। গোপনীয় তথ্য জোগাড় করে অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগে শাস্তির প্রথম ধাপ হিসেবে ২৭ আগস্ট হুয়াওয়েকে চিঠি দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। হুয়াওয়ে রিভিউ প্যানেলে এই শাস্তির চিঠির বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্মূল্যায়ন) আবেদন করে। সিপিটিইউ এই শাস্তির চিঠি অকার্যকর বলে আদেশ দেয়। সঙ্গে আবেদন ছাড়াই তিন কোম্পানিকে যোগ্য এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শাস্তির আদেশ যোগ করে চিঠি দেয়।
প্রসঙ্গত, আসাদুজ্জামান চৌধুরী চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে বিটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বিটিসিএল’র ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ফিন্যান্স) আনোয়ার হোসেনকে অতিরিক্ত দায়িত্বে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।