গ্রাহকবান্ধব করতে দেড় বছর পর ফের ডেটা নির্দেশিকায় পরিবর্তন-পরিমার্জন এনে নতুন নির্দেশিকা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নির্দেশিকায় একটি সিদ্ধান্ত বিলুপ্ত করে পরিবর্তন-পরিমার্জনের মাধ্যমে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ২১টি সিদ্ধান্ত। স্পেশাল ডে প্যাকেজের সর্বোচ্চ মেয়াদ ৩ দিন থেকে করা হয়েছে ৭ দিন। আর নতুন এসব সিদ্ধান্ত অক্টোবর হতে বাস্তবায়ন করতে দেয়া হেয়েছে নির্দেশনা।
এই নির্দেশনা নিয়ে রয়ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ৩ দিনের মেয়াদ নিয়ে সমালোচনা হলেও প্রমোশনাল এসএমএসের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪ টি থেকে কমিয়ে ৩টি করা, সর্বোচ্চ ৫০ জিবি ডেটা পর্যন্ত ডেটা ক্যারিফরওয়ার্ড করা, গ্রাহক তার পছন্দ অনুযায়ী টকটাইম, ডেটা ভলিউম, সোশ্যাল প্যাক, এসএমএস ঠিক করে ‘ফ্লেক্সিবল প্ল্যান’ হিসেবে নিজে একটি নিয়মিত প্যাকেজ তৈরির মতো সুযোগ থাকার মতো বিষয়ে সুন্তুষ্ট অনেকেই।
সূত্রমতে বিটিআরসি ২০২২ সালে মোবাইল অপারেটরগুলোকে ইন্টারনেট প্যাকেজের জন্য ৯৫টি প্যাকেজ অনুমোদন করেছিল। সেগুলো কমিয়ে বর্তমানে ৪০টি করা হচ্ছে।
বস্তুত, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মোবাইল ইন্টারনেটে বর্তমানে ৩, ৭, ১৫, ৩০ দিন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ রয়েছে। রয়েছে ২ ও ৩ ঘণ্টার আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্যাকেজও। বর্তমানে আনলিমিটেড প্যাকেজের ইন্টারনেট রয়েছে। এছাড়া কিছু দিন আগে ২৮ দিনের প্যাকেজও ছিল। কিন্তু তিন দিনের মেয়াদ বাতিল নিয়ে জোর সমালোচনা চলছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘মোবাইল অপারেটরদের ৩ দিনের নিচের মেয়াদের কোনও ইন্টারনেট প্যাকেজের অর্থ হলো প্রলোভনের মুলা ঝুলিয়ে দিয়ে অস্বাভাবিক চার্জ করা। অপারেটররা সেটাই করে। ৩ দিনের মেয়াদের প্যাকেজ বেশি দামে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়।’
উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা হিসাবে দেখেছি, ৩ দিনের যেসব প্যাকেজ ছাড়া হয়েছে, সেগুলোর পুরোটা ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করতে পারে না। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতারিত হয়। এই সিদ্ধান্তে নিম্ন আয়ের মোবাইল ব্যবহারকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এতে ইন্টারনেটের দামও বাড়বে না।’
তবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী, বেকার, শিক্ষার্থী এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষজন মোবাইল ইন্টারনেটের বড় গ্রাহক। এ সকল গ্রাহকদের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেজ যা স্বল্প মূল্যে গ্রাহকরা কিনতে পারে, এই শ্রেণীর গ্রাহকের সংখ্যা বাংলাদেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। বিটিআরসি যদি এমন সিদ্ধান্ত নিত যে তিন দিনের জন্য বর্তমান যে প্যাকেজ বা ক্ষুদ্র প্যাকেজের যে মূল্য ঠিক সমপরিমাণ মূল্য দিয়েই সাত দিন বা ১৫ দিনের প্যাকেজ গ্রাহক কিনতে পারবে সেক্ষেত্রে বিটিআরসি কে আমরা সাধুবাদ জানাতাম। বর্তমান সময়ে ৭ দিনের সর্বনিম্ন একটি প্যাকেজের মূল্য ১৪৯ টাকা থেকে ৩০ দিনের প্যাকেজ এর সর্বনিম্ন মূল্য ৭৯৯ টাকা। আর আনলিমিটেড প্যাকেজ সাধারণত কর্পোরেটরা ব্যবহার করে যার মূল্য ১১০০ টাকার উপরে। স্বল্প আয়ের এমনকি শিক্ষার্থী বেকার তরুণ-তরনে শ্রমজীবীদের পক্ষে ২০০ বা ৩০০ টাকা দিয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করা অসম্ভব।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মে মাসে অপারেটরদের কাছে এই বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল মাসে তাদের সব প্যাকেজ ও সেখানে গ্রাহকদের সেবা নেয়ার বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল বিটিআরসি’র সংশ্লিষ্ট কমিটি। মে মাসের মাঝামাঝি হতে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক মাসব্যাপী একটি গ্রাহক জরিপ করে তারা। ৩০ মে এসব বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধি, গ্রাহক, টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের নিয়ে উম্মুক্ত আলোচনা ও পরামর্শ সভাও করে বিটিআরসির ওই কমিটি।