সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে যেসব উদ্বেগ আসছে তা নিয়ে আলোচনা করছে সরকার। অধ্যাদেশ থেকে সাইবার বুলিং রাখার বিধান থেকে সরকার সরে এসেছে। এটা যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত বিধান হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের নীতি পরামর্শক (সমন্বয় ও সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে বাংলামোটর জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ডেটা ভিশন: তারুণ্যের বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব’ শিরোনামের আলোচনা অনুষ্ঠানে এমনটাই জানান তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
সম্প্রতি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়ার অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। যেখানে সাইবার বুলিং, বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারসহ বেশ কিছু বিধান নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
এসব সমালোচনার জবাবে বক্তব্যে ফয়েজ আহমেদ বলেন, , অধ্যাদেশে জব্দ, তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অবহিত করবে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ধারাটি সংকুচিত করে শুধু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে হ্যাকিংয়ের বেলায় তা নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দায়িত্বের অংশ হিসেবে পলিসি অ্যাডভাইজর বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যেমন- সেমিকন্ডাক্টর, সাইবার সিকিউরিটিসহ যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রয়োজন সে ক্ষেত্রগুলো নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। শুধু গোপনীয় উপাত্ত দেশের ভেতরে ডেটা সেন্টারে সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক করা হবে। বাংলাদেশের সাইবার প্রোটেকশন অর্ডিনেন্সের আধুনিকায়নের পাশাপাশি জনগণের মতামত আমলে নিয়ে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধন হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট তৈরি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডাটা এভেন্যু তৈরি এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন।
ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, ইন্ডাস্ট্রি, একাডেমিয়া এবং সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার উপর গুরুত্ব দিয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় ল্যাব তৈরি এবং ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি তৈরি করা হবে। একইসঙ্গে আইসিটি এবং টেলিকমিউনিকেশনের বিভিন্ন খাতে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের রেখে যাওয়া মনোপলি এবং দুর্নীতির ইতি টেনে ইন্টারনেটের দাম কমানো এবং ইন্টারনেটের স্পিড বৃদ্ধি করা হবে।
দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা অর্থ লেনদেন (পেমেন্ট) ব্যবস্থা পেপ্যাল প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ঠিকানা যাচাই ব্যবস্থা নেই। পেপ্যাল ঠিকানার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করে। পেপ্যালে টাকা আসার পাশাপাশি টাকা যেতেও দিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সার্বক্ষণিক আর্থিক স্ক্যাম (প্রতারণা) পর্যবেক্ষণ করে না কোনো সংস্থা। এ বিষয়গুলোর সুরাহা না হলে পেপ্যাল আসা কঠিন; কিন্তু সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বক্তব্যে দেশের রাজনীতিকরা ক্রমে চোর-ডাকাত হয়ে উঠছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, আমরা শুধু রাজনীতিকদের রাজনৈতিক জীবন দেখি। তার আয়-রোজগারের বিষয় ভেবে দেখি না। তাই তারা যেন দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আয় করতে পারে সে দিকটায় নজর দেয়া দরকার। একইসঙ্গে এই কাজটাকে যে পাহাড়সম বাধা হিসেবে দেখা হয় সেটা ততটা নয়। কমিউনিকেশন দক্ষতা হলে এই বাধা অতিক্রম করা যায়।
এসময় আইসিটি বিভাগের এই নীতি পরামর্শকের কাছে নিজের কিছু চাওয়া তুলে ধরেন সারজিস। সেগুলো হলো- আইসিটি খাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আমলনামা করা ও লুটপাটের জন্য যেসব ধান্দাবাজির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বাতিল করা; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মুঠোফোনে সক্রিয় তরুণদের সেখানে উৎপাদনশীল কাজে লাগানো যায় কি না- সে চিন্তা করা; আইসিটি বিভাগের উদ্যোগ ও সুযোগগুলো কী কী এবং তা কীভাবে পাওয়া যাবে- তার সহজবোধ্য প্রচারণা এবং নতুন কোনো ভবন না করে আগের ভবনগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য মো. আজাহার উদ্দিন অনিক এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এছাড়াও জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, কমিটির আইসিটি সেলের সদস্য মো. আজহার উদ্দিন অনিক, কমিটির সদস্য টিনা নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
