রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ইসিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার) সামনে দুই ব্যাবসায়ী নেতার প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার বিকেলে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে ভিডিওটি ছড়িয়ে পরে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সামনে ৪-৫ জন মিলে এহতেসামুলকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরও ৬-৭ জন। সবাই মুখোশ পরা। চাপাতির আঘাতে এহতেসামুল রাস্তায় পড়ে যান। এর পরও তার ওপর কোপ চালানো হয়। তিনি ওঠার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু হামলাকারীদের আঘাতে উঠতে না পেরে এক পর্যায়ে সড়কে শুয়ে পড়েন। তখনও আঘাত করতে থাকে দুর্বৃত্তরা। আবারও তিনি ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। হামলার সময় সড়কে পথচারী এবং গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। কিন্তু হামলাকারীদের ঠেকাতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। দেড় থেকে দুই মিনিট পর হামলাকারীরা সটকে পড়ে।
কমিটি নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব, পানি ও ইন্টারনেট সরবরাহ, পার্কিং ও ফুটপাত দখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় এই দুই নেতার ওপর হামলা চালানো হতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচার দাবিতে শনিবার দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডে তারা বিক্ষোভ করেছেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভ সমাবেশে ইসিএস, সহসভাপতি মো. নজরুল ইসলাম হাজারী দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এই পৈশাচিক হামলা আমাদের হতবাক করেছে। হামলাকারী সন্ত্রাসী শক্তি মার্কেটেরি শান্তি ও নিরাপত্তাকে দুর্বল করতে চাচ্ছে। তবে তারা কখনোই আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না। কোনোভাবে সন্ত্রাসীরে কাছে মাথা নত করবো না। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়বো। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য প্লাটফর্মে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা হবে।
বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী তৌফিক এহসান ও তার লোকজন নির্বাচন ছাড়াই গত ১৫ বছর ধরে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতি দখল করে রেখেছিল। তৌফিক ছিলেন সভাপতি। তারা মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যবসায়ীরা কমিটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তখন তৌফিকসহ তাঁর লোকজন পালিয়ে যায়। এর পর ১৩ আগস্ট নতুন করে ১৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামকে। ওয়াহিদুল জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও এহতেসামুল যুগ্ম আহ্বায়ক।

ব্যবসায়ী মালিক সমিতির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম বলেছেন, ১৫ বছর ধরে যারা মার্কেট সমিতি দখল করে রেখেছিল, তারা সমিতির প্রায় ৫০ কোটি টাকা লুট করেছে। লুটের প্রমাণ মুছে ফেলতে তারা পালানোর সময় সমিতির সব কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর মার্কেটের সামনে কেউ কেউ ফুটপাত দখলের চেষ্টা করে। এতে বর্তমান কমিটির নেতারা বাধা দেন। মার্কেটে খাবার পানি ও ইন্টারনেট সরবরাহ এবং পার্কিং দখল নিয়েও ওয়াহিদুল ও এহতেসামুলকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এসব কারণে তাদের ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফ জানিয়েছেন, সিসিটিভি ক্যামেরার কয়েকটি ফুটেজে তে দেখা গেছে, হামলায় ১০-১২ জন অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে এক-দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। হামলায় জড়িত বাকিদেরও শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। হামলার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব আছে কিনা, মার্কেট সমিতি এবং চাঁদাবাজির কোনো বিষয় আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিউমার্কেট থানা পুলিশ জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় ওয়াহিদুল হাসান বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলা করেছেন।