সার্ভার জটিলতায় খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) নেওয়া বন্ধ রেখেছে হবিগঞ্জের উপজেলা ও ইউনিয়নে পর্যায়ে থাকা ৪৬টি ভূমি অফিস। দায়িত্বরতরা ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন প্রকল্পের সার্ভারে ধীরগতির অজুহাত দেখিয়ে খাজনা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ কেরেছে ভুক্তভোগীরা। ফলে ভূমির ক্রেতা ও বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।
এ নিয়ে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের তহসিলদার মো. বদরুল আলম জানিয়েছেন, জেনারেশন-১ থেকে সার্ভারকে জেনারেশন-২তে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। আশা করি শিগগির সমস্যা সমাধান হবে।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে এত দুর্ভোগে তহসিলদার এবং কার্যালয়ে কর্মরতদের গাফিলতির রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রিয়াংকা পাল জানিয়েছেন, সার্ভারে ধীরগতির কারণেই দুর্ভোগ বেড়েছে। দায়িত্বরতরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন।
জানাগেছে, স্বাভাবিক সময়ে একেকটি উপজেলা ভূমি অফিসে দৈনিক দেড় থেকে দুইশ’ দলিল রেজিস্ট্রি হলেও এখন সেখানে এখন ১০ থেকে ১৫টিতে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। হবিগঞ্জ পৌর ভূমি অফিস থেকে সূত্রে প্রকাশ, স্বাভাবিক সময়ে এখানে দিনে অন্তত ৪০ জন সেবাগ্রহীতার খাজনা নেওয়া হত। আর এখন দিনে ৩ থেকে ৪ জনের বেশি লোককে এই সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বাকিরা হতাশ হয়ে ফিরছেন।
টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রি করতে চেয়েও ক্রেতাকে জমি রেজিস্ট্রি করে করে দিতে না পারায় অভিযোগ করেছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচপাড়িয়া গ্রামের নূর মিয়া। একইভাবে আরও দুইজন ভুক্তভোগী হবিগঞ্জ শহরের উত্তর শ্যামলী এলাকার সাংবাদিক নজরুল ইসলাম ও বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইয়ামিন মিয়াও জানিয়েছেন তাদের ভোগান্তির কথা।
এই তিনজন জানান, তাদের নিজ নিজ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কয়েকবার গিয়েও খাজনা পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে জমির দাম নির্ধারণ হয়েছে, কিন্তু অল্প টাকা খাজনা বাকি থাকায় ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি করে দিতে পারছেন না।
এছাড়াও এক মাস ধরে ভূমি অফিসে আসা-যাওয়া করেও খাজনা পরিশোধ করতে পারেননি নজরুল ইসলাম নামের স্থানীয় অধিবাসি। তার অভিযোগ, সরকার এত টাকা ব্যয় করে সবকিছু আধুনিকায়ন কলেও দুর্ভোগ কমেনি। ভূমি অফিসে দায়িত্বরতদের অবহেলা লোকজনকে সুফলবঞ্চিত করছে।
এ নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক মোহাম্মদ আলী চিশতি জানান, তার ২০ জন গ্রাহক জমি কেনাবেচার বায়না করেছেন। কিন্তু খাজনা রশিদের অভাবে রেজিস্ট্রি হচ্ছে না, তাই পুরো লেনদেনও করা যাচ্ছে না। জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে রোজ দেড় থেকে দুইশ’ দলিল রেজিস্ট্রি হয়। আর এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫টি হচ্ছে। লোকজন আসছেন না।
একই তথ্য দিয়ে বানিয়াচং উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক তৌহিদুর রহমান পলাশ জানিয়ছেন, আগে দৈনিক দেড় শতাধিক দলিল হত। এখন ৮/১০টির বেশি হচ্ছে না। আমরা গ্রাহকদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
জানা যায়, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন প্রকল্পের আওতায় গত ২৬ নভেম্বর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভারে সিস্টেম উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। পরে চালু হলেও কিছু জটিলতায় ভূমি অফিসগুলোতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ও নামজারী কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সফটওয়্যার হালনাগাদের কারণে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে বিধায় ভূমি উন্নয়ন কর আদান-প্রদান ও নামজারীর কাজে গতি কমেছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে।
এদিকে, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক ইফতেখার হোসেন সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের এ সমস্যার জন্য দোষারোপ করেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সার্ভারের আপগ্রেডেশন কাজ শেষে কিছু জটিলতা থাকলেও তা ডিসেম্বরের প্রথম দিন চালু করে দেওয়া হয়। এখন স্থানীয় তহসিলদার ও দায়িত্বরতরা তাদের অজ্ঞতা ও অনাগ্রহের কারণে সেবাগ্রহীতাদের ফেরত দিচ্ছেন। সার্ভারে প্রবেশ করতে হয়তো একটু সময় লাগছে, এজন্য তারা সেবাগ্রহীতাদের বলে দিচ্ছেন সার্ভার বন্ধ।