মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বুধবার রাজধানীর প্রশাসনিক এলাকার আইসিটি টাওয়ারে এই ৩টি সফটওয়্যার ও ১টি বাংলা ফন্ট, বিটিসিএল এর ২টি ইন্টারনেট সেবা প্যাকেজ ও টেলিটকের ই-সিম উদ্বোধান করা হয়। এগুলো হলো- বাংলা টেক্সট টু স্পিচ- উচ্চারণ; বাংলা স্পিচ টু টেক্সট- কথা; বাংলা ওসিআর-বর্ণ; বাংলা ফন্ট-পূর্ণ উদ্বোধন করেন। বিটিসিএল এর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট জিপন-এর ঘোষণা করা হয় ‘সুলভ’ ও ‘ভাষা’ নামের দুইটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ। এই প্যাকেজে গ্রাহককে বিনামূল্যে রাউটার দেবে সরকারি টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি।
সেবাগুলো উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযাগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এসময় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন ও টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে নিজেদের ভাষায় ভাষাকে ভালোবাসার কথা শোনায় দেশের ৪০টি নৃ-গোষ্ঠী। দিবসটি উদাযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশীদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, একুশ শোকের হলেও; এটা আমাদের গর্বের। একুশের একুশে ডাক ও তথ্য প্রযুক্তি একসঙ্গে করে অন্তর্ভূক্তি ও সমন্বিত পদক্ষেপের নতুন একটি ভিত্তি রচনা করলাম। দেশের গবেষক ও উদ্ভাবকরাই এসব প্রযুক্তি সেবা তৈরি করেছেন। ৪০টি সফটওয়্যারের ১৬টি কম্পোনেন্টের ৭টিই বাংলাদেশের কোম্পানি করেছে। এসব প্রকল্পে দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় বিসিসি’র সঙ্গে কাজ করেছে। তারা সবাই মিলে সফটওয়্যারগুলোর ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট করেছে। এগুলো মেইড ইন বাংলাদেশ। এটাই আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ-এর দৃষ্টান্ত।
তিনি আরো বলেন, নতুন সেবার মধ্যে গুগল জি-বোর্ডের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এর অ্যাকিউরিসি রেট। উচ্চারণ, কথা, বর্ণমালা, পূর্ণ, অনুভব, ধব্বনি, গুরু সব কিছুই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটা আগামী দিনের সার্চ ইঞ্জিন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মনির্ভরশীলতার সুদূরপ্রসারি পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের সভাপতি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ভাষা আন্দোলন শুধু সাংস্কৃতিক আন্দোলন নয়; এটা অর্থনৈতিক আন্দোলনও। ভাষা হচ্ছে ‘সামাজিক প্রযুক্তি’। ভাষা’র রাজনৈতিক তাৎপর্যও গভীর। এ কারণেই ভাষা আন্দোলন থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশ এসেছে। দেশকে ভালোবেসে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে এই সামাজিক প্রযুক্তির যুথবদ্ধ উন্নয়নে ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মাননা দেয়া হবে। তাই আমরা সবাই প্রমিত বাংলা ব্যবহার করবো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে একাধিক ভাষা সম্পর্কে দক্ষতা প্রয়োজন। তাই আঞ্চলিক ভাষাকে স্ট্যান্ডার্ড বাংলা ও বিদেশী ভাষা শেখার জন্য নতুন সফটওয়্যারে ‘অনুবাদ’ ফিচার যুক্ত করা দরকার। তবে গুগল-এ না থাকলেও নতুন সফটওয়্যারে আমরা বানান শুদ্ধের সুুযোগ রয়েছে।
প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৪৭ এর স্বাধীনতা সাথে সাথে বাঙালী জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ৫৪ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের জয় পায় যুক্তফ্রন্ট। এরপর বাঙলির ভাষার ওপর আঘাত আসে। সেই আঘাত বাংলা সাধারণ মানুষ সম্মিলিত ভাবে মোকাবেলা করেছে। সেদিনের শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তরিত করতে হবে।
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বিশ্বজুড়ে কলোনাইজশনের মূল টার্গেট ছিলো ভাষা। দ্বিতীয় যুদ্ধের পর শুরু হয় ডিকলোনাইজেশন। এর ফলে তখন বিশ্বজুড়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। আমাদের এ উপমহাদেশে তখন বাংলাদেশ ভাষার স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অনশন গবেষণার দাবি রাখে।
সভাপতির বক্তব্যে রণজিৎ কুমার বলেন, বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা ৪০টি নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা নিয়েও কাজ করছে বিসিসি। বাংলা ভাষা যেনো অন্য কোনো ভাষার আগ্রাসনে হারিয়ে না যায় সে জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।