চারদিনের জাপান সফরের দ্বিতীয় দিন প্রতিরক্ষা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকারে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও জাপান। প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কিশিদা ফুমিও এর উপস্থিতিতে বুধবার আইসিটি বিষয়ক চুক্তিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির সঙ্গে সই করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এই চুক্তির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উভয় দেশ তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে একসঙ্গে কাজ করবে। এজন্য সরকার, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা পর্যায়ে সাইবার সুরক্ষার অধিকতর উন্নয়নে প্রস্তুতি গ্রহণ, কর্মদক্ষতা উন্নয়ন, অনুশীলন ও পদ্ধতি নিয়ে যৌথভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে উভয় দেশই।
শুধু একটি চুক্তি হিসেবে দৃশ্যমান হলেও এই সমঝোতা চুক্তির অধীনে উভয় দেশের আইসিটি শিল্প খাতের সাম্প্রতিক উন্নয়নের তথ্য আদান-প্রদান; বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সহযোগিতা; ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল দক্ষতা নির্মাণ কর্মসূচি গ্রহণ; চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রতিযোগিতায় সোসাইটি ৫.০ নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্টে একসঙ্গে অংশগ্রহণ করবে জাপান-বাংলাদেশ।
এছাড়াও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে সাইবার হুমকি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়; সাইবার নিরাপত্তার বর্তমান সমস্যা নিয়ে সংলাপ; প্রচলিত সাইবার নিরাপত্তা নীতি এবং সর্বোত্তম অনুশীলন সম্পর্কে তথ্য বিনিময়; মানবসম্পদ-দক্ষতা উন্নয়য়নে বিশেষজ্ঞ বিনিময় করা হবে।
পাশাপাশি সাইবার স্পেসে আন্তর্জাতিক আইনের প্রযোজ্যতা পুনঃনিশ্চিত করে, রাষ্ট্রীয় আচরণের ক্ষেত্রে ২০১৩, ২০১৫ এবং ২০২১ সালের UNGGE রিপোর্টের বাস্তবায়নকে উন্নীত করতে জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ। সাইবারস্পেস, এবং সাইবারস্পেসে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ ও অ-বাধ্যতামূলক নিয়ম মেনে চলা এবং সেইসাথে যথাযথভাবে কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস (CBMs) পরিচালনা করে এবং দক্ষতা উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচেষ্টাও চালাবে জাপান ও বাংলাদেশ।
সর্বোপরি বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী এবং আইটি খাতের কর্মীদের আপস্কিলিং প্রোগ্রাম গ্রহণে জাপানী টেক ইউনিভার্সিটি এবং ইনস্টিটিউটের সাথে আইসিটি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে এই চুক্তির মাধ্যমে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) চেয়ারম্যান ও সিইও নরিহিকো ইশিগুরু, জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগ (জেবিপিএফএল) সভাপতি আসো তারো এবং জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা সঙ্গে বৈঠক করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
এছাড়াও আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলনে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশি আইসিটি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাপান ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (জিসা)-র সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস। জিসা চেয়ারম্যান তাকাশি হারা এবং বেসিস সভাপতি রাসেল টি. আহমেদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষরের সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জিসা’র সভাপতি তাকেশি মিয়ামোতো এবং বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চুক্তি-বৈঠকের ফাঁকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে জাপানের কোতো-কু, আমোই-এ জাপানিজ ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব এমার্জিং সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন (মিরাইকান) পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তারা কীভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন, প্লাস্টিক ও মানুষের অন্যান্য কর্মকাণ্ড মানবজাতি ও এ গ্রহের অন্যান্য প্রাণীদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে সে সম্পর্কে এবং এটি থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে অবগত হন।