গ্রামে শহরের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার পর্যাপ্ত হার্ডওয়্যার থাকলেও সফটওয়্যারের সঙ্কট রয়েছে। এ কারণেই ডিজিটাল সংযোগ থাকার পরও গ্রাম থেকে শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। ডিজিটাল শক্তিতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করার মাধ্যমে এই প্রবণতা রোধ করা যাবে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এজন্য সুদূর প্রসারী ‘গ্রাম হবে শহর’ পরিকল্পনা বস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মাধ্যে বস্তির শহর থেকে মানুষের গ্রামে ফেরার ঢল নামবে বলে মনে করেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান।
আর টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নে জাতীয় ভাবে অধ্যাপকসহ তৃণমূলের পরিকল্পনাবিদদের প্রকল্প প্রণয়ন কাজে অন্তর্ভূক্তির জোরালো দাবি জানান ঢাকা ৮ সংসদীয় আসনের সাংসদ রাশেদ খান মেনন।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব মতামত তুলে ধরেন বক্তারা। বঙ্গবন্ধুর নগর ভাবনা ও বাংলাদেশ ২০৪১; স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স আয়োজিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন। সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মাদ মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় প্রায় ১২ জন সংসদ সদস্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকামুখী চাপ প্রশমনে প্রধানন্ত্রী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ফলে ঢাকাতেই এখন সবগুলো চাহিদা পূরণ হয়। শুধু বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য অবাদান রাখতে পারেনি রাজউক। আর এখন অনলাইনেই ভিকারুন্নিসা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানের শিক্ষা অর্জনের সুযোগ হয়েছে।
এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদেরকেই উন্নয়নের নেতৃত্বে নিয়ে আসার আহ্বান জানান এই নগরপিতা। তিনি বলেন, “আমি মনে করি পরিকল্পনার কোনও বিকল্প নেই। প্রথম কাজটিই হলো পরিকল্পনা। প্রথমে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বিত উন্নয়ন করতে হবে। আমরা যদি এভাবে করতে পারি, তাহলে সেই উন্নয়নের ফলপ্রসূ সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারব। কিন্তু সেবাদানকারী সংস্থাগুলো কেবল প্রকল্পভিত্তিক উন্নয়ন করছে। এতে হয়তো আমরা কিছুটা সুফল দিতে পারছি।”
সমন্বিত পরিকল্পনার ঘাটতির কয়েকটি উদাহরণ টেনে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বলেছি, আমাদের সাথে আপনাদের (অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থাগুলো) সমন্বয় করতে হবে এবং তা পরিকল্পনার পর্যায়েই করতে হবে। অনেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরে আমরা এখন সেটার কিছুটা ফল পাওয়া আরম্ভ করেছি। তার প্রেক্ষিতে এমআরটি’র প্রকল্প পরিচালক তাদের বিদেশি পরামর্শকসহ আমার সাথে বৈঠকে বসলেন৷ আমি বিদেশি পরামর্শককে সেই যাত্রাপথে যাত্রী সংখ্যা, যাত্রী চাহিদা নিরূপণ, এই যাত্রাপথের ইকোনমিক ভায়াবিলিটি কি ইত্যাদি বিষয় জিজ্ঞেস করলাম। তখন বিদেশি পরামর্শক অকপটে স্বীকার করলেন — এগুলোর কোনটিই তার ফিজিবিলিটি স্টাডিতে নেই। শুধুমাত্র স্পেকুলেশনের ওপর ভিত্তি করে আনুমানিক চিন্তায় তাদের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে।”
এসময় জাতীয় বাজেট থেকে কল্যাণ পরিকল্পনায় বরাদ্দ চান ফজলে নূর তাপস। হাউজিং দিয়ে নগরায়ণ এক নয় উল্লেখ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্যটেলাইট শহর করা হলে নগর বিকেন্দ্রীকরণ সফল হবে।
বিআইপি’র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, লক্ষীপুর-৪ আসনের আবদুল মান্নান, শরীয়তপুর-৩ আসনের নাহিম রাজ্জাক, সিলেট-৩ আসনের হাবিবুর রহমান, মহিলা আসন-১১ এর আরমা দত্ত, গাইবান্ধা-১ আসনের শামীম হায়দার পাটোয়ারী বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম, নগর গবেষণা কেন্দ্রের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম মর্তুজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান শেষে আইসিইউ আরপি’র ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন নগরিপতা।