দেশের সাইবার আকাশ নিরাপদ রাখতে দক্ষ সাইবার নিরাপত্তা কর্মী গঠনের পাশাপাশি দেশেজুড়ে নৈতিকতা ও সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ইথিক্যাল হ্যাকার তৈরি করাটা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে এই ‘ডিজিটাল আপদ’ মোকাবেলা করতে গিয়ে একক ব্যবসায় পর্যায়ে খরচ বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায় মনোযোগে যেনো নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগ নিয়ে চিন্তাবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় ‘ক্যাসপারস্কি সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা নিয়ে রাজধানীর কাওরানবাজারের বেসিস অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে আইসিসি কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোহাম্মাদ আতিকুর রহমান, ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের হেড অব বিজনেস নাজিব রাফে, স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের ম্যানেজার (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মুশফিকুল আলক খান, ওয়ালটন কম্পিউটারের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মেহেদি হাসান, ক্যাসপারস্কি দক্ষিণ এশিয়ার রিটেইল সেলস ম্যানেজার শিবসঙ্কর খাড়া দে, ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার পুরুষত্তম ভাটিয়া, ক্যাস্পারস্কি’র বাংলাদেশ পরিবেশক স্মার্ট টেকনোলজিসের হেড অব সফটওয়্যার বিজনেস মিরসাদ হোসেন বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে আইসিসি কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোহাম্মাদ আতিকুর রহমান ‘ক্যাসপারস্কি সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ ২০১৯’ বিজয়ীদের আইসিসি কমিউনিকেশনে শিক্ষানবীশ হিসেবে যোগ দিতে পারবে বলে ঘোষণা দেন। বক্তব্যে তিনি কীভাবে বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ হচ্ছে, ব্যবসায় এর প্রভাব এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সাইবার নিরপাত্তা নিয়ে সিসিএ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, দেশে এখন ভিপিএন ব্যবহার করে অপরাধ করা হয়। ফলে আইপি ট্রাক করাও অনেক ক্ষেত্রে জটিল হয়ে পড়ে।
আতিকুর রহমান বলেন, সাইবার সিকিউরিটি কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়। আন্তর্জাতিক ভাবেই এই নিরপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। খোদ আমেরিকা থেকেও ফেক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে আমরা যারা ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছি। অবস্থাটা এমন- ব্যবসায় মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তার বক্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট টেকনোলজিসের সফটওয়্যার বিজনেসের বিজনেস হেড মিরসাদ হোসেন বলেন, আসলে শিক্ষিত হওয়ার আগেই আমরা ডিজিটাল হয়ে গেছি। এটাই আমাদের জন্য সমস্যা প্রকটতার কারণ। মূলতঃ ২০১৬ সালে হ্যাকারার সুইফট কোডের মাধ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর আমরা বিষয়টিকে আমলে নিয়েছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দক্ষ সাইবার নিরাপত্তা তৈরি গড়ে তোলার এই আয়োজন বিশ্ববাজারের চাহিদা মেটাতে অবদান রাখবে বলে মনে করেন এই বক্তা।
এক পর্যায়ে ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের হেড অব বিজনেস নাজিব রাফে বলেন, ইথিক্যাল হ্যাকার তৈরির পাশাপাশি সর্বস্তরে নৈতিকতার বিকাশ ঘটানোর ওপর নজর দেয়ার গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে শেয়ার আইপি বন্ধের দাবি জানান। বলেন, মূলতঃ ব্যাংক, ডার্ক ওয়েব কিংবা বিটকয়েন সাইটগুলোতেই হামলা করার জন্য ওঁত পেতে বসে থাকে হ্যাকারার। ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশে হামলা করা হয় বেশি।
অপরদিকে সাইবার হামলা মোকাবেলার দক্ষতা অর্জন করলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ডিজিটাল উদ্যোগগুলো সুসংহত হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ওয়ালটন কম্পিউটারের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মেহেদি হাসান।
স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের ম্যানেজার (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মুশফিকুল আলক খান বলেন, এই মুহূর্তে দেশের ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে বেশি সাইবার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা এখনো এটিএম জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এসব বিষয় নিয়ে শিগগিরি তার প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করবে বলেও জানান তিনি।
ক্যাস্পারস্কি প্রতিনিধি পুরুষত্তম ভাটিয়া বলেন, মূলত বাংলাদেশে র্যানসম হামলার ঝুঁকি সবেচেয়ে বেশি। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ায় পকেটই এখন ব্যংক হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিশিং এর মতো ঘাঁপটি মেরে থাকা সাইবার অপরাধীদের বিষয়ে আমারদের আগাম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ২০১৬ সাল থেকে ক্যাস্পারস্কি বাগ বাউন্টি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে।
বাগবাউন্টি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ১০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন ক্যাসপারস্কি দক্ষিণ এশিয়ার রিটেইল সেলস ম্যানেজার, শিবসঙ্কর খাড়া দে। তিনি বলেন, ওয়াইফাই সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এরকম ফ্রি জিনিস ব্যবহারের আগে সকলকেই সচেতন থাকা দরকার। এছাড়া পোলিও টিকার মতোই সাইবার হামলার ঝুঁকি থেকে আগাম নিরাপদ থাকতে তার প্রতিষ্ঠান একটি আগাম নিরাপত্ত ব্যবস্থা তৈরি করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আলোচনার শেষ দিকে সাইবার নিরপত্তায় দক্ষরা যেন অবৈধ হ্যাকিংয়ে জড়িয়ে না পড়েন সেজন্য সকল পর্যায়ে নৈতিকতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান সকলেই।