২০০৯ সালে লিফ কে-ব্রুকস প্রথম বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন তার অনন্য আবিষ্কার ‘ওমেগল’। এটি একটি বিনামূল্যের অনলাইন চ্যাট পরিষেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইট, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের একে অপরের সাথে মেসেজ এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে কথোপকথনের সুযোগ দেয়। এটি চালু হওয়ার মাত্র কয়েক বছর আগে ফেসবুক এসেছিলো।
কিন্তু তৎকালীন সময়ে ফেসবুকের থেকেও ওমেগল অধিক জনপ্রিয় হয়েছিলো। যার অন্যতম কারণ, ব্যবহারকারীরা নিবন্ধন ছাড়াই অর্থাৎ নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপনে রেখে যেকোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাথে চ্যাট করতে পারতেন। তবে বর্তমানে এই প্ল্যাটর্ফর্মে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই দীর্ঘ ১৪ বছর পরিষেবা দেওয়ার পর ওমেগলে প্ল্যাটফর্মকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রতিষ্টানটির কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। ফলে বিদ্যমান ব্যবহারকারীরা আর ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন না।
ওমেগল হলো একটি ড্যানিশ শব্দ, যার অর্থ খোশগল্প। আসলে এই প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা লিফ কে-ব্রুকস জানিয়েছেন, কলেজে পড়াকালীন তিনি লাজুক প্রকৃতির হাওয়ায় সহপাঠীদের সাথে মিশতে পারতেন না। তার এই ‘সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ স্বভাবই তাকে ওমেগল নামের অনলাইন চ্যাটিং ওয়েবসাইটটি তৈরি করতে উৎসাহ দিয়েছিলো। তবে এই ব্যক্তিগত কারণ ছাড়াও ওমেগল বিকাশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, বিশ্বের আনাচে-কানাচে থাকা বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের সাথে অনলাইনে আলাপচারিতার সুযোগ করে দেওয়া।
উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই এই প্ল্যাটফর্মটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এমনকি কয়েক বছরের মধ্যে দেখা যায় ওমেগল প্রায় ৩০ লাখ দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ছুঁয়ে ফেলেছে। এরকম ব্যাপক জনপ্রিয়তার প্রথম কারণ হলো এটি একটি বিনামূল্যের চ্যাট প্ল্যাটফর্ম। দ্বিতীয়ত ওমেগল ব্যবহারের জন্য সাইন-আপ বা রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই।
তবে জনপ্রিয়তার পারদ যত উর্দ্ধমুখী হয়েছে, ততই হ্যাকারদের কুনজরের শিকার হচ্ছিলো ওমেগল। যেকারণে প্ল্যাটফর্মটিতে বারবার বট ও ম্যালওয়ারের আক্রমণ ধেয়ে আসছিলো। উপরন্তু, অশালীন ও অযাচিত চ্যাটিং নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও কিছু ব্যবহারকারী এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে যারপরনাই ব্যভিচারী কাজকর্ম করা শুরু করেছিলো। এইসকল সমস্যার সমাধান করতে ওমেগল কর্ণধার, মনিটরড চ্যাট সিস্টেম চালু করে, যা প্ল্যাটফর্মের নিয়ম লঙ্ঘন করলেই চ্যাট থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারকারীদের বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ওমেগল দ্বারা চালু করা এই চ্যাট সিস্টেমটি পুলিশ কর্মকর্তাদের বহু অপরাধ ট্র্যাক করতে সহায়তা করেছে। এই বিষয়ে ব্রুকস জানিয়েছেন যে, একাধিক ব্যক্তি বিভিন্নপ্রকারের অপরাধমূলক কাজ করাকালীন প্ল্যাটফর্মের ভিডিও ফিডে ধরা পড়েন। ওমেগল উপযুক্ত প্রমাণ প্রদান করে এইসকল ব্যক্তিদের কারাগারে পাঠাতে সাহায্য করেছে।
তবে হাজারো নিরাপত্তাজনিত সতর্কতা অবলম্বনের পরও হ্যাকারদের নাস্তানাবুদ করা যায়নি। উল্টে, কিছু অসাধু ব্যক্তি বারবার প্ল্যাটফর্মটির কমিউনিকেশন সার্ভিস টুলের উপর আক্রমণ হেনেছে। ফলে উল্লেখিত যাবতীয় কারণে ওমেগল -কে সচল রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। সর্বোপরি ব্যবহারকারীদের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলো। যেকারণে প্রতিষ্ঠাতা লিফ কে-ব্রুকস পরিস্থিতি সামাল দিতে দীর্ঘ ১৪ বছর পর তার এই অনলাইন চ্যাটিং পরিষেবাটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ডিবিটেক/বিএমটি