টঙ্গীর তুরাগতীরে রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ। সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে ৯টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। তবে ৯ টা ২৫ মিনিটের দিকে বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে টিনের ছাউনিতে বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে একটি ড্রোন।
এই সময়ে মুসল্লিদের মধ্যে দেখা দেয় ড্রোন আতঙ্ক। এক পর্যায়ে মুসল্লিরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। অবশ্য মোনাজাতের পরে ইজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয় একটি ড্রোন ইজতেমা ময়দানের টিনের ছাউনিতে আঁছড়ে পড়েছিল এতে ভয় বা আতঙ্কের কোন কারণ নেই।
পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে ড্রোনটি উদ্ধার করে। তবে ড্রোনটির পরিচয় এবং পরিচালনার উদ্দেশ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সূত্র মতে, সরাসরি সম্প্রচারের সুবিধার্থে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং অনেক ইউটিউবারও ড্রোনের মাধ্যমে লাইভ করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জের বাহাদুর সাদী ইউনিয়নের জুগলি গ্রামের লোকমান মিয়ার ছেলে আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার সামনে হঠাৎ তিনটি ড্রোন পড়ে গিয়ে বাঁশের সঙ্গে লেগে শব্দ হয়। এতে আতঙ্ক দেখা দিলে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু হয়।
টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বেলায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ড্রোন পড়ার আতঙ্কে অনেক মুসল্লি দৌঁড়ে হাসপাতালে আসেন। আহতদের মধ্যে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ৪০ জনের মধ্যে রয়েছেন আবুল কালাম (৫৫), আলামিন (৩২), আজাদ (৩০), ওবায়দুল্লাহ (৩২), রাতুল (১৮), আব্দুল করিম (২৮) সাইফুল ইসলাম (৩৮), জাফর উদ্দিন (৩১) জয়নাল (২৪), মকবুল হোসেন (৬৪) সোহাগ (৬০), মোশারফ (৩০), কোরবান আলী (২৫), সাইফুল ইসলাম (৩৫), সালামত (১৮), মুস্তাকিন (৩৩), কবির হোসেন (৩০), মুবিন (১৮), আয়নাল হক (২২), মামুন হোসেন (২১), মো. বাসেদ (১৩), খোকন (৪৩), জুয়েল (২৫), কবির হোসেন (৪৬), নাজিম উদ্দিন (৪১), জবরুল (৩১), জয়নাল (৫৪), কাওছারুল আলম (২৮), রায়হান (২৭), জহরুল (২৮), আলি নেওয়াজ (৩৮), আফতাব উদ্দিন (৪৭) মো. আমান (২৮), আনোয়ার (৪৫), সোহেল (৩৫), ফজল হক (৪৫) ও মুজাফফর আলী (৪৪) প্রমুখ।
টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, শতাধিক মুসল্লি আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা ইজতেমার মোনাজাত চলাকালে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ায় একটি ড্রোন পড়ে যায়। এর শব্দ থেকে আতঙ্কের সৃষ্টি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জিএমপির অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, কামার পাড়া সড়কে ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ায় একটি সক্রিয় ড্রোন মাটিতে পড়ে যায়।গ্রামের সহজ সরল মানুষ এটা দেখে আতঙ্কে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করে। এসময় কয়েকজন আহত হয়।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা। ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম আয়োজন হয়েছিল ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। দিন দিন লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্প, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পর ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে নিয়মিত আয়োজন হয় বিশ্ব ইজতেমার। বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতকে কেন্দ্র প্রতি বছর ইজতেমার শেষ দিনে তাবলিগের সাথী ছাড়াও সাধারণ মুসলমানরা ভীড় জমান তুরাগ তীরে। কানায় কানায় ভরে উঠে পুরো টঙ্গী এলাকা। অনেকে আগের রাত থেকেই ময়দানের আশপাশে অবস্থান নেন।