স্টার্টআপ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে শিকেয় তোলো। এর ওপর বিফলতার হার ৯৮ শতাংশ। বিপরীতে স্টার্টআপের সামাজিক প্রভাব কয়েক গুণ বেশি। সাধারণ ব্যবসা থেকে এর বিস্তারও জ্যামিতিক হারে বাড়ে। তাই সবার জন্য স্টার্টআপ নয়। স্টার্টআপ তাদের জন্য যাদের রয়েছে সত্যিকারের সমস্যা চিহ্নিত করে এর টেকসই সমাধান দেয়ার প্রতি তীব্র আকাঙ্খা। তাই স্টার্টআপ শুরুর আগে সম্ভাব্য গ্রাহকের সঙ্গে আলাপ করে বাজারের বিদ্যমানের শুন্যাতা খুঁজে বের করে খুবই সাধারণ একটি সমাধান উদ্ভাবন করতে হবে। এই সমাধানটি পুরো নতুনও হতে পারে আবার বিদ্যামান কোনো সেবার সাবস্টিটিউটও হতে পারে।
রবিবার ভার্চুয়াল সেমিনারে এমনটাই জানান সনি যুক্তরাজ্যের সিনিয়র সফটওয়্যার প্রকৌশলী প্রকৌশলী ড. রাসেল আনাম। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), পাসপোর্ট এবং হজ পরিষেবার ওয়েবসাইট সহ দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোর মতো জাতীয় প্রকল্পগুলির বিকাশে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং শিল্পে ভূমিকা পালনকারী এই ব্যক্তি সফল স্টার্টআপ ধারণাও উপস্থাপন করেন তিনি।
তিনি বললেন, একা একা কোনো স্টার্টআপ গড়ে উঠতে পারে না। সফল স্টার্টআপ হতে হলে একক মানসকিতার ভিন্ন দক্ষতার কো-ফাউন্ডার লাগবে। কর্মচারীকে বেতনের সঙ্গে মুনাফা শেয়ার করতে হবে। এছাড়াও কোম্পানির খরচ ও ব্যয় কমাতে সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। খরচ কমানো এবং ভাইরাল মার্কেটিংয়ে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
“কীভাবে একটি আইসিটি স্টার্টআপ তৈরি করবেন” কর্মশালায় তিনি আরো বলেছেন, এই সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সবুজ প্রযুক্তিতে। একইসঙ্গে একক সবাস্ক্রিপশনের মাধ্যমে কম খরচে সেবা দিলে সহজেই বাজারে সেবা দিতে সক্ষম হবেন। তবে প্রতিনিয়ত সেবা বা পণ্যের মানোন্নয়ন করতে হবে। কেপিআই নির্ধারণের ক্ষেত্রে মিনিমাম ভ্যুালুড প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে এর লাইফ টাইম কস্টকে গুরুত্বে নিতে পারবে।
আলোচনায় একটি বিজনেস মডেল কীভাবে করতে হয় তা বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেন প্রাণঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেন তিনি। রাসেল জানান, সময় মতো বিনিয়োগ না পাওয়া এবং প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে না থাকা ইত্যাদি কারণে স্টার্টআপ গুলো ফেইল করে।
এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ইউআইইউ প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান দেশের যানজট ও পরিবেশের সমস্যা সমাধানে তরুণদের ব্লকচেইন ও এআই এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ভালো স্টার্টআপ গড়ে উঠবে। তবে আইসিটি খাতে স্টার্টআপগুলি অর্থনীতিতে বিপ্লব আনতে পারে এবং কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগ পরবর্তী প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের লালন-পালন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেশন চেয়ার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ মোঃ রোকনুজ্জামান প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, স্টার্টাআপ ব্যবসায়ের একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙ্গে দেয়। বিফলতার হার অনেক বেশি হলেও সামনের দিনে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটবে। কেননা, মানুষ সহজাত ভাবেই একজন উদ্যোক্তা। সফল হতে হলে স্টার্টআপগুলোকে স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।
কর্মশালাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ সায়েন্স রাইটার্স অ্যান্ড জার্নালিস্ট ফোরাম (বিএসডব্লিউজেএফ) এবং সদস্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ সায়েন্স জার্নালিস্টস (ডব্লিউএফএসজে)। কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন BSWJF-এর সাধারণ সম্পাদক মীর লুতফুল কবির সাদী। তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান আইসিটি খাতে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরেন।