প্রযুক্তিখাতে আলো ছড়ানো বাংলাদেশের এক ঝাঁক গ্লোরি গার্লদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের দ্বিতীয় পর্বের লিডারশিপ প্রোগ্রাম- গ্লোরি গার্লর্স। এই পর্বে প্রযুক্তি কীভাবে নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং এজন্য আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের নেয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এতে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে নিবন্ধিত প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই গ্লোরি গার্লসদের নিয় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সেমিনার। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত লেখক, শিশু অধিকার কর্মী ও জলবায়ু পরিবর্তন সংস্কারক ফাতিহা আয়াত। এসময় উপস্থিত নারীদের কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি ব্যবহারে পরাদর্শী হয়ে দেশের সমস্যাগুলো বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
বক্তব্যে আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের এই গ্লোরি গার্ল অ্যাম্বাসেডর বলেন, বিশ্বে তুলে ধরারর মতো বাংলাদেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই এই ইস্যুগুলো বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার মতো মেয়ে খুব একটা নেই। এজন্য আমেদের কৃত্রিম প্রযুক্তির মতো ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলি অন্বেষণ করতে হবে। এআই এর মতো প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে হবে। এটা ব্যবহার করতে পারলে আমরা অনেক সমস্যাই বিশ্বে তুলে ধরতে পারবে। সচেতনতা গড়ে তুলতে পারবো। এজন্যই আমি জিরো অলিম্পিয়াড শুরু করেছি। কেননা, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের ১৭টি এসডিজি লক্ষ্য পূরণের ঘাটতি গুলো আমাদের শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস) চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান, টুগ্যাদার ইনিশিয়েটিভস চেয়ানম্যান সৈয়দা নওশাদ জাহান প্রমী ডি ক্যাসালিয়া লিমিটেড পরিচালক সাবিলা ইনুন, ডিজি ডট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েদা নাফিজা রেজা, দাড়কাক প্রতিষ্ঠাতা নওরিন হক রিদি, অরুতাস ইন্টেরিওর বিডি’র ব্যবস্থাপনা অংশীদার অরুপা দত্ত, এলিগ্যান্ট আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফাহমিদা হোসাইন এবং ডিজাইনারস টু ইন্টেরিয়রস ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া হক প্রযুক্তির শক্তিতে মেয়েদের ক্যারিয়ার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা মনে করেন, প্রযুক্তি খাতে নারীদের আরও বেশি উপস্থিতি নিশ্চিত করা শুধুমাত্র তাদের জীবনের উন্নতি নয়, বরং পুরো সমাজের উন্নতির জন্যও অপরিহার্য।


অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ এর ফাউন্ডার মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান, চিফ এডুকেটর ওয়াহিদ নিউটন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো আব্দুর রহমান নিপু, ট্রাস্টি বোর্ড মেম্বার গোলাম সারওয়ার এবং প্রজেক্ট ডিরেক্টর এম আব্দুল্লাহ।
আয়োজকদের পক্ষে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার প্রধান মো আব্দুর রহমান নিপু বলেন, “নারীদের প্রযুক্তির মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন শুধু তাদের জীবনে পরিবর্তন আনবে না, বরং পুরো সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান বলেন, “আমার লক্ষ্য নারীদের প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা, যাতে তারা প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে পারে এবং নিজের জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে। আমরা প্রযুক্তির শক্তি ব্যবহার করে নারী সমাজকে ক্ষমতাশালী করতে চাই, যাতে তারা নিজেদের কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করতে পারে।”
প্লাটফর্মটির চিফ এডুকেটর ওয়াহিদ নিউটন বলেন, “গ্লোরি গার্লস এর মতো উদ্যোগগুলো নারীদের প্রযুক্তি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের নেতৃত্বের ক্ষমতা তৈরি করছে, যা আমাদের প্রযুক্তির ভবিষ্যতকে আরও শক্তিশালী করবে।” এছাড়াও ট্রাস্টি মেম্বার গোলাম সারওয়ার বলেন, “এই ইভেন্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শক্তিশালী নেতৃত্বে পরিণত করা এবং তাদের জন্য একটি উন্নত ও সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।”
প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়। নানা আয়োজনে এই অলিম্পিয়াড চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী চিন্তা-ধারার প্রসারে এবারের অলিম্পিয়াডে শিশু শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। এবারের অলিম্পিয়াডটি ৫টি রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ৪টি রাউন্ড অনলাইনে হবে। শুরু হবে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। এসব রাউন্ডে অংশগ্রহণকারীরা ২১টি বিভিন্ন সেগমেন্টে প্রতিযোগিতা করছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রোগ্রামিং, সাইবার সিকিউরিটি, রোবটিকস, আইওটি, এআর, ভিআর, কুয়ান্টাম কম্পিউটিং, এআই, চ্যাটজিপিটি, টেক ফ্রিল্যান্সিং, গ্রিন ডিজিটালাইজেশন এবং ড্রোন টেকনোলজি। চূড়ান্ত ফাইনাল রাউন্ড হবে ৩০ এপ্রিল অফলাইনে।