ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের সময় দফায় দফায় ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করায় ক্ষমতায় থাকতেই সমালোচিত হয়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকার। নির্বাহী আদেশের নামে লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখিয়ে হোয়াটস আপ নির্দেশনায় দেশকে ১০ দিনের মতো ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন রাখাকে অসাংবিধানিক বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেছেন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইন্টারনেট বন্ধ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। ব্রডব্যান্ড কিংবা মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের এই ধরনের কোনো কন্ডিশন দেয়া হয়নি যে তারা চাইলেই ইচ্ছেমতো ইন্টারনেটে বন্ধ করতে পারে। আর সেগুলো নিয়ে যখন সরকারের পক্ষ থেকে মিথ্যাচার করে তখন আমরা একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। টানা ৫দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে ৫০ শতাংশ টাকা গ্রাহক থেকে নিতে পারে না। যারা জুলাই মাসের অ্যাডভান্স পেমেন্ট নিয়েছেন তারা হয় সেগুলো ফেরত দেবে, নয়তো আগস্ট মাসের সঙ্গে সমন্বয় করবে। তবে এই লিগ্যাল নোটিশের কোনো জবাব এখনো সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
ব্যক্তি জীবনে নিজেও অন্তরঙ্গ ব্রডব্রান্ড থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে বলার পরও বিল সমন্বয় না করে গত ১১ আগস্ট তাকে বকেয়া বিল দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। অগ্রিম বিল পরিশোধ করায় তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে ফোন করে সমন্বয় করতে বললেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এই আইনজীবি। তিনি বলেন, “আমরা অন্তরঙ্গ ডটকমের বনশ্রীর একজন গ্রাহক। আমরা প্রতি মাসের বিল এডভান্স পেমেন্ট করি। ১ আগস্ট, ২০২৪ বেলা ১২:৩০ দিকে ব্রডব্যান্ডের নেটের বিল চাইতে আসলে, আমরা বিটিআরসি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জুলাই মাসের অর্ধেক বিল সমন্বয় করে এই মাসের বিল অর্ধেক নিতে বলি। বিল নিতে আসা ব্যক্তিটি জানায় এটা সরকার করেছে আমাদের কিছু করার নেই আমরা সম্পূর্ণ বিল নিবই।এমনকি বিল পরিশোধ না করলে লাইন কেটে দেয়ার হুমকি দেয়। এই কথা শোনার পর, আমি অন্তরঙ্গ ডটকমের অফিসে ফোন করি এবং বিষয়টি জানাই। বার বার বিটিআরসি এর নির্দেশনার বিষয়টি উল্লখ করি। এবং জুলাই মাসের অর্ধেক বিল সমন্বয় করে এই মাসের বিল অর্ধেক নিতে বলি।এর পরিপ্রেক্ষিতে, উনারা প্রথমে এ বিষয়ে জেনে জানাবে বলে ফোন রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পরে, ফোন দিয়ে অফিস থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন আমরা অর্ধেক বিল নিব না। কিছুই করার নেই। সরি।”
এই ক্ষতিপূরণের জাতীয় দায় সরকারের হলেও গ্রাহক হিসেবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকেই এই দায় নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন ইশরাত। এছাড়াও এ বিষয়ে তদন্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে তদন্ত কমিটি করেছে সেখানে দায়ী ব্যক্তিরা থাকায় তাদের বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র আস্থা নেই বলেও জানান তিনি।
ইশরাত বলেন, ইন্টারনেট শাট ডাউনের ক্ষেত্রে জড়িতদের দাযিত্ব অবহেলার দায়ে বিভাগীয় মামলা রুজু করে সরকারকেই এই শাস্তি দিতে হবে। দায় সরকারকেই নিতে হবে। দায়ীদের সনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে। শুধু ইন্টারনেট শাট ডাউন নয়, ওই সময় যারা ইন্টারনেট শাটডাউন নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলাও করা দরকার।
তিনি বলেন, জনগনের সাথে প্রতারণার করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। তাই, প্রতারণার জন্য মামলা ও শাস্তি হওয়া উচিত। এছাড়াও যে সরকারি অফিসারগন জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজুহওয়া উচিত। আর দোষী প্রমানিত হলে ১ বছর পর্যন্ত সাজা ও জরিমানা রয়েছে। এছাড়া, সরকারি অফিসারগনকে বিভাগীয় মামলায় দোষী প্রমানিত হলে চাকরি হতে বরখাস্ত হতে পারেন অভিযুক্ত ব্যক্তি।
এ নিয়ে শিগগিরই বিটিআরসিতে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি লিগ্যাল নোটিশের জবাব না পেলে নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করতে চান তিনি।
এদিকে সরকারি সংস্থাগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেনি; বরং তার বদলে নানা সময়ে নানা বক্তব্য দিয়েছিলেন জুনাইদ আহ্মেদ। তিনি সামনে এনেছিলেন ইন্টারনেট অবকাঠামোয় অগ্নিসংযোগের কথা।
সূত্র বলছে, সরকারি দুই সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিত। এমনকি তখনকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকও সরাসরি ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সরকারি সংস্থাগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেনি; বরং তার বদলে নানা সময়ে নানা বক্তব্য দিয়েছিলেন জুনাইদ আহ্মেদ। তিনি সামনে এনেছিলেন ইন্টারনেট অবকাঠামোয় অগ্নিসংযোগের কথা।
টেলিযোগাযোগ আইনের ৯৭ ধারা অনুযায়ী সরকার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারে। অবশ্য আইনজীবীরা মনে করেন, জনশৃঙ্খলার নামে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক বিরোধিতা ও বিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেট বন্ধের কৌশলটি ব্যবহার করেছে। মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছে।