এমআইএসটিতে ৩ দিনব্যপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন আইসিইইআইসিটি ২০২৪ অনুষ্ঠিত
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আর নিজেদের উদ্ভাবনী ঝলক দেখিয়ে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) শনিবার শেষ হলো তিন দিনব্যাপী ষষ্ঠ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলজিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন -আইসিইইআইসিটি ২০২৪। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকরা অংশগ্রহণ করেন। গবেষণা উপস্থাপনা আর উদ্ধাবনের চমক দেখিয়ে সমাপনী পর্বটি ছিলো গান, আবৃত্তি, নৃত্য আর আর্কেস্ট্রার মুর্ছনায় রঙিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে আয়োজকদের সঙ্গে মঞ্চে রক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তার হাত থেকেই সম্মেলনের সেরা পেপারের সম্মাননা পুরস্কার গ্রহন করেন এবারের আসরের সেরা কনসেপ্ট জমাদানকারী নাঈমা ফাতিমা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্সআপ আইমান ইকতিদার ও লামিয়া মাহবুব।
রাতে সমপানী অনুষ্ঠানে এমআইএসটি ফ্যাকাল্টি সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তৈরি যুদ্ধের ময়দানে বিপদজনক বিস্ফোরক বহনকারী একটি রোভার উপস্থাপন করা হয়। জানানো হয়, জাতিসংঘের শান্তি মিশনের মতো দামামায় ১৫০ কেজি ওজনের এই রোভার ২০ কেজি ওজন বহন করতে পারে। চলতে পারে ঘন্টায় ছয় কিলোমিটার। ৮০০ মিটারের মধ্যে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ৪০ ডিগ্রি কোনে সিড়ি বেয়ে উপরে আরোহন করতে পারে যে কোনো খারাপ আবহাওয়াতেও। চলতে পারে রাতের অন্ধকারেও।
সপানী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এমআইএসটি কনফারেন্সের চিফ প্যাট্রোন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ইইইই বাংলাদেশ সেকশনের চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক এবং বেগম সারাহনাজ কমলিকা উজ জামান।
প্রবন্ধ উপস্থাপক লন্ডনের কিংস্টোন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অধ্যাপক মোহাম্মাদ নূরুল্লাহ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া মিউজিসিয়ান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জি সেন লাই এর হাতে স্যুভেনিউর তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আইট্রিপলই প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আই ট্রিপল ই বিভাগের সহযোগী ড. আহমেদ আল মনসুরের হাতে সেরা রিভিউ সম্মাননা তুলে দেন। এরপর স্মার্ট বাংলাদেশ ইনোভেশন কনটেস্ট বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন এমআইএসটি কনফারেন্সের চিফ প্যাট্রোন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছে টিম ৮০৪। এই দলের সদস্যরা হলেন রোকোনুজ্জামান সাদ, আরিব আয়মান হক এবং শেখ তানভির ইসলাম উদয়।
এছাড়া প্রথম রানার্সআপ ত্বাকি ইমদাদুল্লাহ নূরের নেতৃত্বাধীন এমআইএসটি দল টিম আইটি ৮০২। এই দলের অপর সদস্যরা হলেন- রুজায়না লাবিবা ও মেহেরুন্নেসা মায়া। সেকেন্ড রানার্সআপ হয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আহসান রফিক।
এবারের সম্মেলনে বেদেশী ৪২টিসহ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৩৯টি গবেষণা পেপার জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে ৫৫টি পেপার গৃহীত হয়। গৃহীত পেপারের মধ্যে আইট্রিপলই বাংলাদেশ পর্বে সেরা গবেষণা পত্র হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন এমআইএসটি’র সালমা সুলতানা মিম। তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন কুয়েটের অধ্যাপক মোঃ মশিউল হক। এরপর শীর্ষ দশটি গবেষণা পত্রের নাম ঘোষণা করা হয়।
থ্রি মিনিট থিসিস প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছে বাংলাদেশ ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভারসিটির দল সায়েম বিন রফিক এবং জাইমা তাসফিয়া রেজা। প্রথম রানার্স আপ হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদুল হাসান আবির ও ইসমাত কাদিরের দল। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের শাহরিয়ার কবির ও নাসিসফ হান্নানের দল।
সেরা পোস্টার উপস্থাপনে অভিষেক ঘোষ, গাজী রাবেয়া ইসলাম ও রুহুল আমিন সাজিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বেগম সারাহনাজ কমলিকা উজ জামান।
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আমি প্রতিনিয়ত চ্যাটি জিপিটি ব্যাবহার করি। কিন্তু এবার দেখতে চাই আগামী জিপিটি তৈরি হবে বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীদের হাতে। এরই মধ্যে আমরা জিপিটি নির্ভর গভর্নমেন্ট ব্রেইনের অধীনে সংবিধান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনিয়োগ এর জন্য জিপিটি আনতে যাচ্ছি। আমি মনে করি এখানে অংশগ্রহণকারীরা এই চ্যালেঞ্জ নেবেন। আপনাদের ভাবনা বাস্তবায়নে আমরা আপনাদের অংশীদার হতে চাই। আপনাদের কাগুজে স্বপ্নগুলো বাস্তবে নিয়ে আনতে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকা গ্র্যান্ট দিতে চাই। প্রতি রাউন্ডে ১ লাখ ডলার ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট করতে প্রস্তুত।
তিন দিনের সম্মেলনে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি, কমিউনিকেশন টেকনোলোজি, ডিজিটাল সিগন্যাল অ্যান্ড ইমেজ প্রসেসিং, অপ্টো-ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ফোটোনিক্স, পাওয়ার ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ড্রাইভস, পাওয়ার সিস্টেম অ্যান্ড রিনিউএ্যাবল এনার্জি, সেমি-কনডাক্টর ডিভাইস অ্যান্ড ন্যানো টেকনোলজি, সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ভিএলএসআই অ্যান্ড সার্কিটস্, মাইক্রোওয়েভ ইঞ্জিনিয়ারিং, স্যাটেলাইট নেভিগেশন, ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন এবং রাডার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক সাম্প্রতিক গবেষণা, প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্পোদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের সমন্বয়ে একটি সার্বজনীন ক্ষেত্র তৈরী হবে যা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নব ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।