আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশনের সুবাতাস বইছে। মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে মেডিয়েশন সেন্টার ও নবউদ্ভাবিত ৯টি কোর্ট প্রযুক্তি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সকল সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় নির্দেশনায় বিচার বিভাগেও বিভিন্নমুখী ডিজিটাইজেশন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও জনবান্ধব ও সহজীকরণ করতে তার আন্তরিক ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। আমরা প্রত্যাশা করি, স্মার্ট বাংলাদেশে বিচার বিভাগও একটি স্মার্ট বিচারবিভাগ হয়ে উঠবে।
আইনমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় করোনা মহামারিকালীন মানুষের ন্যায়বিচার নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং কারাগারে বন্দির সংখ্যাধিক্য বিবেচনা করে “আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারি করা হয় যা পরবর্তীতে সংসদে পাস হয়। এই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা হয়, যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশনে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকার বিশ্বাস করে, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির অধিকারকে অব্যাহত রাখতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন অপরিহার্য।
মন্ত্রী বলেন, বছর দুয়েক আগে উদ্বোধন করা হয়েছিল ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার-যার মাধ্যমে ইতোমধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলা ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে। একই বছরে চালু হয়েছিল ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং; যাত্রা শুরু হয়েছিল জুডিশিয়াল ড্যাশবোর্ড, মাই কোর্ট অ্যাপ এবং অনলাইন কজলিস্টের মতো প্রযুক্তির। আজ সেই ডিজিটাইজেশনের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হলো। উদ্বোধন করা হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মেডিয়েশন সেন্টার ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক উদ্ভাবিত ৯টি কোর্ট প্রযুক্তি।
তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস সব সময়েই একটি অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করে। ডিজিটাইজেশনের কারণে সারা পৃথিবীর মানুষ এখন আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও বেশি আগ্রহী, আরও বেশি আস্থাশীল। সনাতন বিচার ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই যুগে মিলেনিয়েল এবং জেন-জি’সহ নতুন প্রজন্মের তরুণদের আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখা সম্ভব হবে না। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় দিকনির্দেশনায় বিচার বিভাগের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ পরিকল্পনা ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাইমা হায়দার, অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ আমিন উদ্দিন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সামছুল আরেফিন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রাব্বানী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।