প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষাসহ চাকরির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় হিডেন ও স্পাই ডিভাইস দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতি করে আসছিল একটি চক্র। সংঘবদ্ধ এই চক্রটি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সুকৌশলে ফাঁস করতো। এরপর হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এরকম একটি চক্রের মূল হোতাসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ইকবাল হোসেন (৪২), রমিজ মৃধা (৩০), নজরুল ইসলাম (৫০) ও মোদাচ্ছের হোসেন (৬২)। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরমাণ ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা চাকরির পরীক্ষার নামে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শুক্রবার (২০ মে) অনুষ্ঠিতব্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এই চক্রটি বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি করেছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-২ এর একটি দল তাদের গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, বিদেশ থেকে আনা এসব ডিজিটাল ডিভাইস মূলত দুটি অংশে বিভক্ত। ডিভাইসটির একটি অংশ ইয়ার পিস। এটি পরীক্ষার্থীদের কানের ভেতর রাখা হয়। এছাড়া অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সিম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করাতো। পরবর্তীতে পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের নিকট পাঠাতো। প্রতারক চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দেওয়ার জন্য আগে থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখতো। এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার হল থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তর মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে খুঁজে বের করে পরীক্ষারত চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বলে দিতো।
র্যাব কর্মকর্তার জানান, এই প্রতারক চক্রটির মূল হোতা ইকবাল হোসেন। সে ২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী আলতাফ হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার কাছ থেকে এই কৌশল রপ্ত করে ইকবাল। তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা ও বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত রমিজের নামে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। সে ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে ভালো বোঝে বলে ইকবাল তাকে নিজের চক্রে নেয়। গ্রেফতারকৃত নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদফতরে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগদান করে। নজরুল এবং রমিজের বাড়ি পাশাপাশি। চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে নজরুলের। এই সুযোগে সে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতো।