জোরালো হচ্ছে ফেসবুক খুলে দেয়া দাবি
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ফেসবুকে ব্যবাসায়িক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৬২ কোটি টাকা। ফেসবুক কমার্স ব্যবসায়ীর বেশিরভাগ তরুণ। মোট উদ্যোক্তার ৫০% শতাংশ নারী। ফেসবুক কমার্স সম্পর্কিত ফেসবুক পেজের সংখ্যা ৩ লাখের ও উপরে। উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ১০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার ও উপরে।এই সুবিধা গ্রহণের মধ্যে ৭২% শতাংশই পুরুষ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ই-কমার্সের চেয়ে দেশে ইন্টারনেট তথা সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। সরকারি ভাবে এই উদ্যোক্তাদের প্রমোশনও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কেবল নারী উদ্যোক্তারাই প্রতিদিন হারাচ্ছেন ৬০ কোটি টাকার বাজার। ই-কমার্স মিলিয়ে এই ক্ষতির অঙ্ক শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে ফেসবুক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়বদ্ধতার অধীনে আনতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ভাবে হাত বাড়িয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উই। সংস্থাটির সদস্যদের বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে উই হাটবাজার এবং দারজ প্লাটফর্মে যুক্ত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-ক্যাব জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, দেশে ফেসবুকসহ ৫ লাখের মতো ই-কমার্স উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তারা ফেসবুক থেকেই বেশি ব্যবসা পান। আর ১৭ হাজারের মতো উদ্যোক্তা রয়েছেন যাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ পেলেও ফেসবুক ছাড়া ব্যবসায় পরিচালনা করা তাদের জন্য দুরূহ হয়ে উঠছে। তবে আশার কথা তারা ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ায় অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায় চালানো বিজ্ঞাপন গুলো বন্ধ করতে পেরেছে। এতে তাদের কিছুটা হলেও ক্ষতি কমেছে।
তিনি বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ফেসবুক না খোলায় ই-কমার্স উদ্যোক্তারা অর্ডার পাচ্ছে না। মূলত ৮৫ শতাংশের মতো অর্ডার আসে এই মাধ্যম দুটিতেই। ইতোমধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কারণে এই খাতের উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্তমানে খন্ডকালীন কার্ফিউতে বিশেষ সন্ধ্যায় ও রাতে নিত্যপণ্য, ঔষধ ও খাবার ডেলিভারী দেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনলাইনে সংযুক্ত ও ব্যবসায় পরিচালনাকারী দেশের ৭-৮ লাখ উদ্যোক্তার মাধ্যমে দেশ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এই ক্ষতির ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন সময়ে প্রতিদিনের ৮ লক্ষ অর্ডার ডেলিভারীর পুরোটাই বন্ধ ছিল যার পরিমাণ প্রায় দৈনিক ১০০ কোটি টাকার বেশী। বর্তমানে সীমিত ইন্টারনেট চলাকালীন সাধারণ লেনদেন এর মাত্র ৫% এর চেয়ে কিছু বেশী হচ্ছে বলে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এই খাতে ৫ লক্ষ উদ্যোক্তা এবং আরো ১৫ লক্ষ কর্মী, সরবরাহকারী ও সেবাদাতা জড়িত রয়েছে। স্বাধীন কর্মীসহ এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। সকলে এই সময়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এই খাতে গত ১০ দিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৪০০ কোটি টাকার বেশী। এর মধ্যে বড়ো একটা অংশ রয়েছে এফ কমার্স উদ্যোক্তাদের, তাছাড়া মার্কেটপ্লেস, অনলাইন শপ, ফুড ডেলিভারী রয়েছে। ই-কমার্স ভিত্তিক লজিস্টিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। অভৌত পণ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান তথা ই-ট্যুরিজম, ই-টিকেট, ই-লার্নিং, ই-হেলথ ও কনটেন্ট সেবা রয়েছে।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতি কমাতে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি উই ‘হাটবাজার’ এবং ই-কমার্স প্লাটফর্ম ‘দারাজ’ অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক ও ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, দেশের নারী উদ্যোক্তাদের মিনি মাম বাস্কেট ভ্যালু ১৫০০ টাকা। দেশে এই মুহূর্তে চার লাখ নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। এই উদ্যোক্তারা প্রায় শতভাগই ফেসবুক নির্ভর। সেই হিসেবে নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতে আমাদের ক্ষতি ৬০ কোটি টাকার বেশি। তবে এই নির্ভরতা কাটাতে আমরা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় উই হাটবাজার নামে একটি প্লাটফর্ম করেছি। প্রথমে ১০০ জন উদ্যোক্তা নিয়ে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো। তবে গতকাল এফ-কমার্নের বিকল্প হিসেবে সবাইকে জায়গা করে দিতে হাটবাজার-এ কমিউনিটি বিল্ড করেছি। তবে যেহেতু এখন ওদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশন করতে হচ্ছে তাই একটু সময় লাগছে। এছাড়াও অল্টারনেটিভ প্লাটফর্ম হিসেবে কাউকে কাউকে দারজ-এ সক্রিয় করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে দারাজ বাংলাদেশের চিফ অপারেটিং অফিসার খন্দকার তাসফিন আলম দু’দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিষয়টি জানানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনলাইন কেনাকাটা মূলত মোবাইল ইন্টারনেট নির্ভর। আমাদের ৮৫ শতাংশই সেলারই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ফেসবুকের উদ্যোক্তারা কোনো না কোনো সময় দারাজে ছিলো। তারা আবার অ্যাক্টিভ হচ্ছে। ফেসবুক সেলারদের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি করছি। অ্যাপেই আমাদের বেশি বেচা-কেনা হয়। তবে সেলার-ডেলিভারি ইকো সিস্টেমের জন্য গতিশীল মোবাইল ইন্টারনেট দরকার। তাছাড়া কারফিউ এর কারণে আমরা ঢাকার বাইরে খুব একটা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছি না। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্ডারও স্বাভাবিক হবে। এখন স্ট্রাগল করছি। স্লো ইন্টারনেটের কারণে অর্ডার পেলেও প্রসেস করতে পারছি না।
এদিকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পরে সীমিত আকারে ইন্টারনেট পুনরায় চালু হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া চালু হয়নি। কবে হবে সে বিষয়ে সরকারের তরফে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। ফলে বিপাকে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক এফ-কমার্স উদ্যোক্তা। ফলে প্রতিদিনই জোরালো হচ্ছে ফেসবুক খুলে দেয়ার দাবি।