সামসুল আলম সরকার। জন্ম নরসিংদীর পশ্চিম ভেলানগরে। পড়ালেখার হাতেখড়ি চিনিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ব্রাহ্মন্দী কেকেএম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে এসএসসি এবং ১৯৮৯ সালে এইচএসসির পর চলে আসেন কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। এরপর ১৯৯৩ সালে তিনি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। ১৯৯৭ সালে সেখান থেকে স্নাতক শেষ হবার সাথে সাথেই ডাক পান পার্টেড গ্রুপে।
সেখানে এক বছর কাজ করে যোগ দেন জিওলজিক্যাল সার্ভে ইন বাংলাদেশ-এ অ্যাসিস্ট্যান্ট ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। পরবর্তীতে সেখানেও স্থায়ী হননি। একই বছর বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রে (বিটাক) সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ২০০৫ সালে পাড়ি জমান কানাডাতে। ভর্তি হন উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স শেষ করতেই পেয়ে যান গবেষণা সহকারীর কাজ। পরবর্তী সময়ে ইউএস ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন, টাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ইয়ানফেং অটোমেটিভ ইনটেরিয়র্স এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করেছেন নিয়মিত। সর্বশেষ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে টেসলায় সিনিয়র প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরির সুযোগ পান।
গত বছরের জুলাই মাসে টেসলা থেকে একটা বার্তা আসে সামসুলের কাছে। টেসলার প্রতি তার কোন আগ্রহ আছে কিনা জানতে চাওয়া হয় সেখানে। সম্মতিসূচক উত্তর জানাবার পর শুরু হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া। তিন-চার ধাপে অক্টোবর পর্যন্ত চলে এটি। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০২১ এর নভেম্বরে সুখবরটি পান সামসুল। সিনিয়র প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি মনোনীত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, টেসলার স্বপ্নের প্রকল্প ইলেকট্রনিক গাড়ি তৈরি দলের গর্বিত সদস্য হবারও সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
সামসুল আলম সরকারের বাবা মো. সেকান্দর আলী ছোটখাটো চাকরি করতেন। মা রহিমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। বাবাকে হারিয়েছেন ২০১৪ সালে। এরপর মা’কে নিয়ে স্থায়ী হয়েছেন কানাডার উইন্ডসরে। বর্তমানে মা, স্ত্রী ফেরদৌস জাহান দিলরুবা। ও দুই কন্যাকে নিয়ে সুখে দিন কাটছে তার। তার বড় মেয়ে এবার গ্রেড-৯ এবং ছোট মেয়ে গ্রেড-৭ এ লেখাপড়া করছে।
টেসলাতে যোগদানের অনুভূতি অনন্য ও অসাধারণ বলে মনে করেন সামসুল। তিনি বলেন, পুরোটা সময় এক্সাইটেড ছিলাম, ভালোলাগা কাজ করছিল। সেই ভালোলাগা আরও হাজার গুণ বেড়ে গেল, যখন অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে শুনতে পেলাম সেই অমোঘ বাণী, উই আর বেস্ট এন্ড উই হায়ার দ্য বেস্ট। অল অফ ইউ আর দ্য বেস্ট পিপল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড!
প্রবাসে থাকলেও তার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে। নিয়মিতভাবে খোঁজখবর রাখেন দেশের। মন থেকে সবসময় চান, বাংলাদেশের তরুণরা ভালো করুক, বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়ুক। সেই লক্ষ্যে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুয়েটের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা, দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।