জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নিজস্ব ক্লাউড ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বরোপ করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মী সহ সংশ্লিষ্টদের জ্ঞান অর্জনেরও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয়ক এক কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণের আগে এই আহ্বান জানান মন্ত্রী।
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডেটা আমাদের ব্যবহার করতেই হবে। এটি আমাদের সম্পদ, সুতরাং এটি যেখানে রাখতে হবে সেই জায়গাটি হতে হবে নিরাপদ। বাংলাদেশে এক সময় ক্লাউড বলতে কোনো ধারণা ছিল না। এখন সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে, এখন ক্লাউডের কোনো বিকল্প নেই। সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। তাদের জন্য এ রকম একটি কর্মশালা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
এসময় ডাটা সংরক্ষণ ও সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী
সচেতনতার অভাব ও অতিলোভে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ নিয়্ন্ত্রণ করা যায়নি। তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড নিয়ন্ত্রণহীনতার অন্যতম কারণ ছিল। বর্তমানে সে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি ঘটাতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
কর্মশালায় বাংলাদেশে ক্লাউড কম্পিউটিং-এর প্রয়োজনীয়তা, তথ্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্লাউডের ভূমিকা, ইন্টারনেটের সেবা ও মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। এতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ক সংবাদকর্মীরা।
ইন্টারনেট ছাড়াই সারা দেশে ক্লাউড সেবা দেওয়া সম্ভব। আর দেশীয় ক্লাউড ব্যবহারের মাধ্যমে ডলার সাশ্রয়ের অপার সম্ভাবনার কথা জানান ক্লাউড নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ওপেনস্ট্যাক বাংলাদেশের কান্ট্রি অর্গানাইজার মোবারক হোসাইন। তিনি জানান, বাংলাদেশেও নিজেদের ক্লাউড তৈরি করে ব্যবহার করা সম্ভব। এ কাজে দেশীয় প্রতিষ্ঠান এ ক্লাউড প্লানেট তাদের চারটি ডেটা সেন্টার স্থাপন করেছে ঢাকা, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে। সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছে ওপেনস্টেক ক্লাউড। গত পাঁচ বছরে তারা প্রায় ১০ লাখ মানষুকে সেবা দিয়ে আসছে।
কর্মশালায় বক্তারা তুলে ধরেন, কীভাবে এই দেশীয় ক্লাউড ব্যবহার করে ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব। কারণ দেশীয় ক্লাউড ব্যবহারে বিদেশী সফটওয়্যার বা সেসবের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি কোনো সেবার প্রয়োজন নেই।
দেশীয় ক্লাউডের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে মোবারক হোসাইন বলেন, আমাদের এই দেশি ক্লাউড স্থানীয় ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংযুক্ত বলে বিদেশ থেকে আক্রমণ করা সম্ভব নয়। দেশের ভেতর থেকে কোনো আক্রমণ হলে সেটি তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিহত করা ও দেশীয় আইনে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা সম্ভব। তাই দেশীয় এ ক্লাউড সেবাকে বলা হচ্ছে শতভাগ নিরাপদ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংকের সার্ভার দেশের অভ্যন্তরে রাখা বাধ্যতামূলক। একইভাবে এইনআইডি, টিকিটিংয়ের মতো সেবার সার্ভারগুলো নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের অভ্যন্তরে রাখাও যৌক্তিক। এ ছাড়া স্থানীয় সার্ভারে তথ্য রাখা গেলে সেসব তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন হবে না। এতে গ্রাহকপর্যায়ে খরচ অনেক কমে যাবে।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)-এর সেক্রেটারি মাসুদুজ্জামান রবিন।