সদস্য স্নাতক উত্তীর্ণদের প্রতি প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন অতিমাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটাচ্ছে। অনেকে গেমিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করছে। এতে মেধা ও সময়ের অপচয় হচ্ছে। ফেসবুকে সময় না কাটিয়ে প্রযুক্তির উদ্ভাবক হতে হবে, গেমিং না করে বরং গেম বানাতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘আমাদের অনেককে দেখা যায় গেমিং করে সময় ব্যয় করেন, যিনি গেমিং করেন তিনি কিন্তু কোন আয় করতে পারেন না। তবে যিনি গেম তৈরি করেন তিনি আয় করেন। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি কনজিউমার হবো, নাকি প্রডিউসার হবো। ইন্টারনেটে অনেক কোর্স আছে সেগুলো আত্মস্থ করতে হবে। এখন আপনাদের সনদের প্রক্রিয়া শেষ, তবে লাইফলং শিক্ষার ইচ্ছে যেন এখান থেকেই শুরু হয় সে আহ্বান রাখছি।’
রাজধানীর পূর্বাচলে অন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সেন্টারে শনিবার (১১ মে) বিকেলে অনুষ্ঠিত সিটি ইউনিভার্সিটির চতুর্থ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নওফেল। তিনি বলেছেন, ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, গ্রাজুয়েটদের বলব আপনাদের ভাষা শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। জাতিসংঘের অফিশিয়াল যে ভাষাগুলো আছে সেগুলো আত্মস্থ করতে হবে। যেকোনো ভাষাই হোক, আরবি, ফ্রান্স, জাপানি কিংবা ইংরেজি। ভাষা একটি প্রযুক্তিগত দক্ষতা। এটা না থাকলে বিশ্ববাজারে নিজেদের উপযোগী হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন না। আমাদের ভাষার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা আছে সেটা স্বীকার করতে হবে। সেটা স্বীকার করেই দক্ষতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী হতে হবে। বিশ্ব কর্মজগতে এখন একাডেমিক সার্টিফিকেটের চেয়ে অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমগ্র পৃথিবীতে এখন অ্যাপ্রেন্টিসেশিপ, আর্টিকেলশিপ ও ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তৈরি হয় প্রায়োগিক দক্ষতা।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর লুৎফুর রহমান।
শ্রম ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। কর্মসংস্থান সরকারের প্রধানতম ম্যানিফেস্টো। আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত থেকে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির তিন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর’স স্বর্ণপদক এবং ৯ শিক্ষার্থীকে ভাইস চ্যান্সেলর’স স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। চ্যান্সেলর’স স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন– ইংরেজি বিভাগের সাদিয়া আফরিন তোয়া, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা রহমান ইতি এবং ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোজা খানম।
এছাড়াও সমাবর্তন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি অনুষদ এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের অধীনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের বিভিন্ন ব্যাচের মোট ৯ হাজার ৫৯২ জনকে সনদ প্রদান করা হয়।