এখন পর্যন্ত, কল্পনার চেয়েও শক্তিশালী মনে করা হচ্ছে ওপেনএআই এর তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’-কে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চ্যাটজিপিটি অচিরেই হুমকিতে ফেলতে পারে গণতন্ত্রকেও।
এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত তথ্য বিজ্ঞানী নাথান ই. স্যান্ডার্স এবং হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের প্রভাষক ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিবিদ ব্রুস শ্নেইর।
তাদের মতে, ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাশিয়ার সংস্থা রাশিয়ান ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি কোটি কোটি ডলার খরচ করে শত শত কর্মী নিয়োগ করে যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছিল, সে ধরনের অর্থ ও লোকবল ব্যয় না করেই চ্যাটজিপিটি একই কাজ করতে পারে।
শঙ্কার সপক্ষে যুক্তি টেনে তার বলছেন, চ্যাটজিপিটি এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা কিনা রাজনৈতিক নেটওয়ার্কগুলোর গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারে। এর টেক্সচুয়াল জেনারেশন সক্ষমতা ব্যবহার করে সিস্টেমটি কংগ্রেসের সদস্যদের মধ্যে কে কোন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কতটা প্রভাবশালী; কোন কংগ্রেস সদস্য করপোরেট কর নীতি আর কোন সদস্য সামরিক ব্যয় সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে প্রভাব খাটাতে সক্ষম—তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের করে ফেলতে পারে। লবিস্টদের মতোই এই সিস্টেমটি স্বার্থ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী কমিটিতে থাকা প্রতিনিধিদের টার্গেট করতে পারে এবং একটি বিল ফ্লোর ভোটে গেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যদের ওপর দৃষ্টি ফেলতে পারে।
একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা কর্মকর্তাদের সক্ষমতা ও প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারার ক্ষমতা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এটি দিয়ে হ্যাক করা এবং অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা সম্ভব হবে। এই ধরনের সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় ডেটার সহজপ্রাপ্যতা এতো অবাধ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে শনাক্ত করা এতো কঠিন যে, যৌক্তিকভাবেই মনে হচ্ছে, আইনপ্রণেতাদের বেছে বেছে টার্গেট করা হবে। দিন যত যাবে ততই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষিত হবে। আর ততই ঝুঁকিতে পড়বে গণতন্ত্র।
পাশপাশি কিছু পেশার মানুষের চাকরিও ঝুঁকিতে ফেলবে হালের ট্রেন্ড এই চ্যাটজিপিটি। কবিতা কিংবা নাটকের চিত্রনাট্য রচনার মতো প্রতিভানির্ভর সৃষ্টিশীল কাজ দখল নিতে পারে এই চ্যাটবট। বিজ্ঞাপন, নিবন্ধ, সাংবাদিকতা ও কনটেন্ট তৈরির কাজে এর ব্যবহার করে বর্তমানের তুলনায় লোকবল কমিয়ে দিতে পারে গণমাধ্যমগুলো। ভাগ বসাতে পারে আইন পেশাতেও। ব্যারিস্টারের সহকারী হিসেবে। বাজার গবেষণা বিশ্লেষকদের পেশাও ঝুঁকিতে পড়তে পারে এই জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমারের কারণে।
শুধু কি তাই, দ্রুত ও নির্ভুল গাণিতিক হিসাব করতে পারায় সফটওয়্যার ডেভেলপার, ওয়েব ডেভেলপার, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, কোডার এবং তথ্য বিশ্লেষণের মতো প্রযুক্তিনির্ভর পেশাগুলো-কে হালকা করে দিতে পারে এই চ্যাটজিপিটি। ক’দিন বাদেই হয়তো দেখা যেতে পারে ক্লাস নিতে শুরু করেছে কৃত্রিম বুদ্ধির বটটি। একইভাবে আর্থিক খাতের চাকরি, পুঁজিবাজারের কাজ, হিসাব রক্ষণ, গ্রাহক সেবা এমনকি গ্রাফিক্স ডিজাইনেও মানুষ পরিণত হতে পারে চ্যাটজিপিটি’র দাসে। ফলে নতুন এই বটকে কেউ কেউ এখন ‘বদ’ হিসাবেও আখ্যা দিচ্ছেন।