প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সিদ্ধান্তের কারণে স্মার্টফোন উৎপাদনের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদক থেকে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ডিজিটাল মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর ২০২৫ সাল নাগাদ প্রযুক্তি শিল্প থেকে ৫ বিলিয়ন রপ্তানি আয় এবং ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য পূরণে ‘উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার এই মিশনে নেতৃত্ব দেবে সিম্ফনি। অদূর ভবিষ্যতে দেশের এই প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ও এলজি’র মতো সফল গ্লোবাল ব্র্যাণ্ডে পরিণত হবে।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) পড়ন্ত দুপুরে সাভারের আশুলিয়ায় দেশের অন্যতম মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিম্ফোনির কারখানা পরিদর্শন শেষে মতবিনিময় সভায় এমন আশাবাদের কথা ব্যক্ত করলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ সুবিধা সরেজমিনের দেখভালের জন্যই নিয়মিত এই পরিদর্শন করা হচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। বাজেট পূর্ব এই পরিদর্শনে ভবিষ্যতে সুদিনের আশা প্রত্যাশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এই সফর সিম্ফনি ও এর পরিবারের সকলের কাজের স্পৃহা বাস্তবায়ন এবং সরকার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্র পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ।
দুই দিনের সরকারি ছুটিতে নিজ নির্বাচনীয় এলকায় কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে সিম্ফনির কারখানা পরিদর্শনে সেখানকার কর্মপরিবেশের প্রশংসা করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে এসে আমি জানতে পারলাম সাড়ে তিন হাজার সিম্ফোনি পরিবারের বাইরেও প্রায় আট হাজার কর্মীদের জন্য ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’ চালু করা হয়েছে। যেখান থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তারা নিত্য পণ্য কিনতে পারছেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে এখন ৩০ শতাংশ নারী কর্মী কাজ করছে। এর অর্থ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নারী কর্মীর লক্ষমাত্রা আট বছর আগেই তারা পূরণ করেছে। এছাড়াও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিম্ফনির নতুন স্মার্টফোন জেড৪২ মডেলের হ্যান্ডসেট উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। ফোনের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব মোবাইল গেম ও নিজস্ব অ্যাপ থাকায় প্রশংসা করে এই উদ্যোগগুলো উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ দেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবয়ানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মত ব্যক্ত করেন পলক।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে সিম্ফোনি নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে বাজারে এলেও ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমদানি করতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্তের কারণে আজ সিম্ফনি সহ দেশি ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১৫টি কোম্পানি আমাদের স্থানীয় চাহিদা চার কোটি স্মার্টফোনের ৯০ শতাংশ মোবাইলই দেশে উৎপাদন করছে। পাশাপাশি রফতানিও শুরু করেছে। এই রফতানিমুখীতাকে উৎসাহিত করতে আমি মাননীয় উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে রপ্তানি প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে বাড়ানোর জন্য আপনাদের পরিবারের সদস্য হিসেবেই চেষ্টা করবো।
এছাড়াও কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ৩ একর জায়গা দেয়ার কথা জানিয়ে পলক সেখানে দ্রুত কারখানা করতে সিম্ফনি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি আশা করবো তারা যেনো হাইটেক পার্কের সুযোগ-সুবিধা নিতে সেখানে একটা ফ্যাক্টারি সেটআপ করেন। পাশাপাশি এক লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুটের এই কারখানাটিকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সিম্ফনি হাইটেক কোম্পানিকে হাইটেক পার্ক হিসেবে ঘোষণা করেবো।
সিম্ফনি কর্তৃপক্ষের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে নিরাপদ মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরির পাশাপাশি তারা মোবাইল গেম তৈরির যেই কার্যক্রম চালাচ্ছে তা এগিয়ে নিতে আইসিটি বিভাগের টিমের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। প্রশংসা করেন সিম্ফনি ফোনে আসা বাংলা এসএমএম পড়ে শোনানো মতো ফিচারগুলোর।
প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মুরাদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এডিসন গ্রুপের পরিচালক ও হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মেজর আবদুল মালেক মিয়াজী, সিম্ফনির শুভেচ্ছাদূত ঢালিউডের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেত্রী শবনম বুবলী এবং বিজ্ঞাপন এজেন্সি পিংক এর ব্যববস্থাপনা পরিচালক নায়ক রিয়াজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, নানা প্রয়োজনে আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন-বিক্রি, সেলফোন সার্ভিস, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ কয়েক লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে মোবাইল ফোন। দেশে বছরে শুধু হ্যান্ডসেটের বিক্রিই হয় ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সমিতির (বিএমবিএ) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১২-১৩টি কোম্পানি ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে মোবাইল ফোন উৎপাদনে। এসব কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা ৪ কোটি ইউনিটের বেশি। দেশের বড় শিল্পগ্রুপ ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স, ওয়ালটন, এডিসনের পরে নতুন করে বাজারে আসছে প্রাণ আরএফএলও। বর্তমানে ওয়ালটন এককভাবে বছরে ৭০ লাখ ইউনিটের বেশি হ্যান্ডফোন উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে। এর মধ্যে স্মার্টফোন উৎপাদন সক্ষমতা ১২ লাখ ইউনিটের।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সমিতির (বিএমবিএ) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১২-১৩টি কোম্পানি ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে মোবাইল ফোন উৎপাদনে। এসব কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা ৪ কোটি ইউনিটের বেশি। নতুন বিনিয়োগ নিয়ে উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে কেউ কেউ। আর কারখানা ও বিপণন মিলিয়ে কর্মসংস্থান এক লাখের বেশি মানুষের। ওয়ালটনের পরেই দেশে মোবাইল ফোনের কারখানা করেছে আরেক দেশীয় ব্র্যান্ড সিম্ফনি। বর্তমানে মাসে প্রায় ৫ লাখ ইউনিট ফোন উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠান। ‘দেশে ফিচার ফোন বাজারের ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ সিম্ফনির দখলে।