মানুষের শরীরে ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস (আইএপি) কমে গেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ব্যাপক আকারে বাড়ে। আরো সহজ ভাবে বললে মানবদেহের খাদ্যনালীর উপরের অংশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জারক রস বা এনজাইম আইএপি কমে যাওয়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন একজন সুস্থ ব্যক্তি। বলা চলে এটিই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। এরই মধ্যে এই কারণের ব্যাখ্যাসমেত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মধু এস মালো। তার সঙ্গে ছিলেন দেশের প্রথিতযশা অ্যান্ডোক্রিনোলজি চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. ফারুক পাঠান, অধ্যাপক ড. সালেকুল ইসলাম। আরও সহযোগিতা করেছেন বাডাসের জগন্নাথ মালো, মেহেদী হাসান রকি, জিনোক বর্মণ, শামিমা আক্তার তিন্নি, স্বপন কে. বর্মণ, তাপস সরকার, বারডেমের আব্দুল মোত্তালিব ও নাঈমুল ইসলাম খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কনকরাজু কালিয়ান্নান।
বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি আয়োজিত‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ আবিষ্কার’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে দেশি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল ডায়াবেটিক আক্রান্ত নন এমন ৬৭৪ জনের ওপর ৫ বছর গবেষণা করে এই তথ্য মিলেছে । যাদের ওপর গবেষণা করা হয়েছে তাদের বয়স ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিল এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভবিষ্যতে আপনার কি ডায়াবেটিস হতে যাচ্ছে? কী ধরনের পরীক্ষা করলে আপনি বুঝতে পারবেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন? এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো আমরা ভালোমতো জানতাম না, দিতেও পারতাম না। এসব প্রশ্ন সামনে রেখে আমরা গবেষণা কাজটি করেছি। প্রথমে আমরা ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা করি। সেখানে দেখা যায়, যেসব ইঁদুরের পেটে আইএপি নামক পাচক রস কম, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মধু এস মালো বলেন, ‘মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের অংশ টক্সিন (এডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এ টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনতে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। ফলে নিম্ন গ্রেডের সিসটেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে।, যাদের ক্ষারীয় ফসফেটিসের ঘাটতি রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি থাকে।’
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এটি ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।’
বাংলাদেশি এ বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমরা একটি কিট তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচ মিনিটেই বোঝা যাবে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। শরীরে আইএপি এনজাইমের পরিমাণ ১১৫ ইউনিটের কম হলে তা ডায়াবেটিস হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। যখন থেকে এটা বোঝা যায়, ঠিক সেসময় যদি পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’
ড. মধু এস মালো বলেন, ‘আমরা এ কিট নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা করবো। এ কিটের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এটি সফল হলে দেশের জন্য এবং মানুষের জন্য অনেক বড় কল্যাণ বয়ে আনবে।’