উৎসবমুখর পরিবেশে নানা আয়োজনে রবিবার দেশজুড়ে পালিত হলো পঞ্চম ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস। সকাল সাতটায় দিবসের শুরু হয় রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর” প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে আইসিটি বিভাগ ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ছাড়াও যোগ দেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় সংগঠনের নেতারা।
এর পর মানিক মিয়া এভিনিউ অংশে আলোচনা সভায় যোগ দেয়ার পর শান্তির প্রতীক পায়রা ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে খামারবাড়ি পর্যন্ত র্যালিতে অংশ নেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বেনজীর আহমেদ।
দুপুরে গণভবন প্রান্ত থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দিবসের মূল কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে ২৪টি ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার হস্তান্তর করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রথমেই হাতের মুঠোয় ভূমি সেবার মোবাইল অ্যাপ তৈরির জন্য এটুআই উপ সচিব দৌলত উজ্জামান খাঁন এবং শাইখ সিরাজ ডিজিটাল উদ্যোগের জন্য মাটি ও মানুষ খ্যাত চ্যানেল আই বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজকে পুরস্কৃত করা হয়।
এরপর জিটুপি পদ্ধতেতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ দলীয়ভাবে সম্মাননা পান। পুরস্কৃত হন ঢাকা কাস্ট প্রতিষ্ঠাতা ফাহরিন হান্নান ও তার দল।
সবার ঢাকা অ্যাপের জন্য উত্তর সিটি মেয়রের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন ঢাকা উত্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা।
দেশে স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম বিকাশে জিপি অ্যাকসিলেরটর উদ্যোগের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান।
এপিআই বিল পেমেন্ট সুবিধার জন্য সফটওয়্যার প্রকৌশলী এ বি এম নজিবুল্লাহ, অনলাইন ইমিগ্রেশন নোটিফিকেশন পদ্ধতির জন্য আইনজীবি মোঃ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী এবং অ্যাপের মাধ্যমে কোভিড টিকা নিবন্ধনের সুযোগ সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউসের নেতৃত্বে পুরস্কার জিতে নেন ‘সুরক্ষা’ দলের ৮ সদস্য।
এরপরই ‘ডিজিটাল হাট’ উদ্যোগের জন্য ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সারের নেতৃত্বে প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত হন ঢাকা উত্তর মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, এটুআই ই-কমার্স লিড রেজওয়ানুল ইসলাম জামিসহ এই দলের অপর তিন সদস্য।
এছাড়াও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, পোশাক শিল্পখাতের বায়োমেট্রিক আইডেন্টিটি অ্যান্ড ওয়ার্কার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের জন্য বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এই পুরস্কার পেয়েছেন।
পাশাপাশি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মোহা আব্দুর রহমান, দলীয় ভাবে গোপালগঞ্জ জেলাপ্রশাসক শাহিদা সুলতানা, বড় ডাক্তার অ্যাপের জন্য জিনিয়া রহমান ও মোঃ মোখলেসুর রহমান, অনলাইন স্থানীয় বাসিন্দা সনদ ব্যবস্থাপনার জন্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান, ই-নালিশ সফটওয়্যারের জন্য নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম খান, মাদারিপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন এবং ডিজিটাল রিটার্ন ট্যক্স সেবার জন্য পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা, মাই আউটসোর্সিং অ্যাপের জন্য এই প্লাটফর্মের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিরুল বাসার ডিজিটাল বাংলাদেশ সৈনিকে ভূষিত হয়েছেন।
অপরদিকে স্মার্ট গ্যাস লিকেজ ডিটেক্টর উদ্ভাবনের জন্য শিক্ষার্থী মাহির আশহাব লাবিব, অনলাইন হোম ডেলিভারি সেবার জন্য রাজশাহীর ফুডশাহী বিডি প্রতিষ্ঠাতা মন্ডল মোঃ আতিকুল হক, ফায়ার ফাইটিং রোবট উদ্ধাবক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানী জুবায়ের এবং এগ্রো-বট উদ্ভাবনের জন্য দলীয় ভাবে চট্টগ্রাম রাইফেলস স্কুলের শিক্ষার্থী তোয়াহা জোবায়ের-আবরার শহীদের দল পেয়েছে প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্মাননা।
যখনই তরুণ উদ্ভাবকদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখনই করতালি দিয়ে তাদেরকে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
বিকেলে আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের উপস্থিতিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন, উপকৃত সকল জনগণ’ নিয়ে জাতীয় সেমিনার শেষে সন্ধ্যায় মিনার, লালন ও জেমসের লাইভ পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি।