প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ অনাগ্রহ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সিটিও ফোরাম সভাপতি তপন কান্তি সরকার। গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ের ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য হাইব্রিড ক্লাউড, হাইব্রিড কম্পিউটিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্যাংকিং ও অপারেশনাল সফটওয়্যারের আধুনিকায়নের ওপর। জোর গুরুত্ব দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তার ওপর।
তিনি বলেছেন, কোভিড ভবিষ্যতবাণীকে হতাশ করে দিয়ে এই মহারারি সময়েও গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ১০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে দেশের আইসিটি খাত বিশ্বসূচকে ২১ তম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশের ফ্রিল্যান্সার ও আইটি বিশেষজ্ঞরা। দেশে বর্তমানে ৪০-৪৫ হাজার আইটি ফ্রিল্যান্সার ও বিশেষজ্ঞ বছরে ৫০০-৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন। মহামারী পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতিতে আইটি নির্ভরতা বর্তমান সময়ের চেয়ে ৬০-৭০ গুণ বেড়ে যাবে। এই সুযোগের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাত সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে যাচ্ছেন।
শনিবার (১৮ জুলাই) মহামারি সময়ে ব্যবসায় ভ্যালু তৈরির উদ্যোগ নিয়ে আয়োজিত ওয়েবিনারে সঞ্চালকের বক্তব্যে এমন পরামর্শ দেন তিনি।
বৈঠকে সংযুক্ত হয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মাদ শিরিন বলেছেন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রযুক্তি। টিঅ্যান্ডটি বা রেডিও লিংক ব্যবহার করে ২০০৩ সালে আমরা অনলাইন ব্যাংকিং শুরু করি। সে সময়ে এফডিআর ছিলো ৯০ শতাংশ। বাকিটা ছিলো কাসা অ্যাকাউন্ট। এখন এটি উল্টো হয়েছে। এটিএমের মাধ্যমে এখন মাসে ৮ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। প্রতিমাসে এক লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট খুলছে। পসের মাধ্যেমে মাসে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। তবে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এখনো জনপ্রিয় হয়নি। ৯০ লাখ গ্রাহকের মাধ্যমে মাত্র ৩ লাখ হিসাবধারী এই সেবাটি ব্যবহার করেন। কোভিডে ই-কমার্স লেনদেন ১০ কোটি বেড়ে ৭০ কোটি হয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে অনেকগুলো মার্কেট আছে। আমাদের মার্কেটের ৮০ শতাংশে মতোই ব্যাংক। আর কিছু কিন্তু নেই। পূঁজি বাজারে ইক্যুইটি, বন্ড এমন কোনো মার্কেটই নেই। বছরজুড়ে আমরা ১৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদী ঋণ দিয়ে আসছি।
এক প্রশ্নের জবাবে বিদেশী সফটওয়্যার ব্যবহার এখনই বন্ধ করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এটিএম বা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং, ইন্টরা ব্রাঞ্চ ট্রান্সফার এগুলো সবই বিদেশী ব্যাংক শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় আমাদের স্থানীয় সফটওয়্যার নিতে পুশ করছে। কিন্তু সেন্ট্রাল ব্যাংক কী করছে? এখানে অনেক কাস্টমান ইনফরমেশন থাকে। অনেক সিকিউরিটি আমাদের মেইনটেইন করতে হয়। এর জন্য রোবাস্ট আর্কিটেকশ্চার থাকতে হয় কিন্তু। এখনো আমার সেই লেবেলে যেতে পারিনি। তারপরও আমরা ছোট খাটো অনেক সফটওয়্যার ব্যবহার করি। এজন্য আমাদের আরেকটু সময় লাগবে।
শাহজালাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলছিলাম। কোভিড আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে। বলেছে,তোমরা ডিজিটালাইজড হও। না হলে সামনের দিন অন্ধকার।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, আমাদের বোর্ড এখন ভার্চুয়াল হয়। পূবালী ব্যাংক নিজেরাই নিজেদের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, কোভিড ১৯ আমাদের একটা ভালো শিক্ষা দিয়েছে। আগামীকালও যদি আমাকে বলা হয়, আমার ফোকাস কি- আমি বলবো আইটি। তারপরও যদি বলা হয় বলবো আইটি। কারণ আইটি ছাড়া ব্যাংক বা বিজনেস করা কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না।