দেশে বর্তমানে সক্রিয় আমদানিকারকের সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি, আর রফতানিতে সক্রিয় আছে পাঁচ-ছয় হাজার। এর মধ্যে মাত্র ২০৮টি প্রতিষ্ঠান ই-পেমেন্টের আওতায় শুল্ক পরিশোধ করে, যা সক্রিয় আমদানিকারকের ১ শতাংশেরও কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কারণে গতি পাচ্ছে না ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে শুল্ক আদায় কার্যক্রম।
শুল্কায়ন প্রক্রিয়া আধুনিক ও সহজ করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে এনবিআর। এ পদ্ধতিতে আমদানি ও রফতানিকারকরা ইউজার আইডি ব্যবহার করে রিয়েল টাইম গ্রস সেটলমেন্ট (আরটিজিএস) গেটওয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই শুল্ক পরিশোধ করতে পারেন। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুল্ক পরিশোধ করা হলে আমদানিকারকের ফোন নম্বরে শুল্ক পরিশোধসংক্রান্ত কনফার্মেশন এসএমএস পৌঁছে যাবে। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যার নেটওয়ার্কে শুল্ক পরিশোধসংক্রান্ত তথ্য আপডেট হবে। কিন্তু সেবাটি চালুর প্রায় তিন বছরেও ই-পেমেন্ট ব্যবহারে খুব একটা আগ্রহী করে তুলতে পারেনি এনবিআর।
বর্তমানে ঢাকা কাস্টম হাউজ, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঢাকা, কমলাপুরের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি), বেনাপোল কাস্টম হাউজ ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৭৮২ কোটি ২৩ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ হয়েছে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ই-পেমেন্ট সেবার আওতায় আসে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেবাটি চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৬৩টি প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধ করছে, যার বেশির ভাগই বহুজাতিক কোম্পানি। এছাড়া বেনাপোল কাস্টম হাউজে ১১, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঢাকাতে ৭-৮, ঢাকা কাস্টম হাউজে ২৫ ও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে একটি প্রতিষ্ঠান ই-পেমেন্টের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ করে।
ই-পেমেন্টের মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৩৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চট্টগ্রাম কাস্টমসের। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা এবং আহরণ হয়েছিল ৪৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ আহসান হাবিব সুমন বলেন, আমদানিকারকদের সদিচ্ছার অভাব আছে। তারা এগিয়ে আসছে না বলেই ই-পেমেন্টের বিষয়টি এখনো এ অবস্থায় আছে। আরেকটা বিষয় হলো ই-পেমেন্ট শুল্ক পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা নেই। এ কারণে যার ইচ্ছা সে করছে, যার ইচ্ছা নেই সে করছে না। এছাড়া সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট যারা, তারা আমদানিকারকের কাছ থেকে ক্যাশ টাকা নিয়ে আমদানি শুল্ক পরিশোধ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে আমার মনে হয়। তা না হলে বিষয়টা তো এমন হওয়ার কথা না।