২০১০ সাল থেকে ভারতে ইন্টারনেটের দ্রুত সম্প্রসারণ শুরু হয়। এই ১০ বছরে দেশটির ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ অনলাইনে যুক্ত হয়েছে, যার ফলে দেশটিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার চেয়ে দ্বিগুন ইন্টারনেট ব্যবহার রয়েছে। খবর সিএনএন।
প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোও বিশ্বের দ্বিতীয় ইন্টারনেট মার্কেটে বেশ নজর দিয়েছে। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ এবং টুইটার প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডোর্সি উভয়েই ভারতে ভ্রমণ করেছেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা করেছেন। এছাড়া গুগল প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই এবং মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা ভারতেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বড় হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম দিকেই বড় প্রযুক্তি জায়ান্টের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ভারতে ভ্রমণ করছেন সত্য নাদেলা এবং অ্যামাজনের জেফ বেজোস।
এসব প্রযুক্তি জায়ান্টদের পাশাপাশি উবার, নেটফ্লিক্স ভারতে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, ভারতের জন্য একাধিক ফিচার প্রথমবারের মতো চালু করেছে এবং তাদের প্লাটফর্মে স্থানীয় ভাষা যুক্ত করেছে। এছাড়া সফটব্যাংক, টেনসেন্ট, বাইটড্যান্স এবং আলীবাবার মতো এশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি ভারতের বড় বড় স্টার্টআপে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
কিন্তু এবার মনে হয় এসব প্রযুক্তি জায়ান্টদের ভারতপ্রীতি শেষ হতে যাচ্ছে। ভারত তাদের দেশে ব্যবসা পরিচালনা নীতিমালায় বেশ পরিবর্তন আনছে এবং আগামী এক দশকে এই বৃহৎ বাজারে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর লাভজনক পরিস্থিতিতে থাকাকে কঠিন করছে।
নতুন নীতিমালায় কোম্পানিগুলোর বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানিগুলো কীভাবে ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছে, অনলাইনে পণ্য বিক্রি করছে এবং তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষা করছে সেসব বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ হতে যাচ্ছে। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন স্থানে সরকারি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ার চলমান কার্যক্রমের ফলে কোম্পানিগুলো তাদের প্রচুর পরিমান গ্রাহক হারাচ্ছে।
প্রায় ৭০ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক এবং ইন্টারনেটের বাইরে থাকা প্রায় একই সংখ্যক জনসংখ্যা নিয়ে ভারত একটি বড় বাজার। তবে বিদেশি কোম্পানিগুলোর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট ও ব্যবহারকারীদের উপর নিয়ন্ত্রণ দিনে দিনে বিশ্বের বৃহৎ গনতন্ত্রকে চীনের মতো করে ফেলছে।
ভারতের ডেটা প্রোটেকশন বিল বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকের কী কী ডেটা সংগ্রহ করছে তা গ্রাহককে জানাতে বাধ্য হবে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে। এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেটা সংগ্রহের জন্য গ্রাহকদের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া এই বিলে ভারতের বাইরে ডেটা সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ হবে।
কিন্তু প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো যেহেতু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং তারা আন্তর্জাতিকভাবে তাদের প্লাটফর্মকে পরিচালনা করে তাই এই নতুন বিল মেনে চলা তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে। শুধুমাত্র স্থানীয় ডেটা সেন্টার চালু করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না। যেকোনো মুহুর্তে গ্রাহকের ডেটা সরকারকে দিতে বাধ্য থাকবে কোম্পানিগুলো, যা তথ্য সুরক্ষার ঘোর পরিপন্থি হবে। এসব পরিস্থিতিতে ভারতে ব্যবসা পরিচালনা বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য খুবই কঠিন হবে।
ভারতের এই নীতিমালাকে ভবিষৎ এর জন্য নেতিবাচক হিসেবে দেখছে প্রযুক্তি জায়ান্ট ও এই খাতের সংগঠনগুলো। তারা প্রত্যাশা করছেন, নিশ্চয় নীতিনির্ধারকরা বিষয় বিবেচনা করবেন এবং দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন।
ডিবিটেক/বিএমটি