আইন-শৃঙ্খলারক্ষাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতেই গ্রাহক সংখ্যায় শীর্ষে থাকা দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন কোম্পানির সাবেক কর্মীরা। অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগে এবং বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিকে প্রবেশের মুখে জিপি হাউসের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করছেন তারা। এতে ভেতরে একপ্রকার অবরুদ্ধ দশায় পড়েছেন দায়িত্বরত বর্তমান কর্মীরা।
তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুক্তি পেয়েছেন তারা। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাদমান ও ভাটারা থানার ওসি মাজহারের উপস্থিতিতে বৈঠকে প্রাপ্য দেনা-পাওনা নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা তাদের ছেড়ে দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জিপি প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী রবি বারের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার তারিখ নির্ধারণ হবে।
গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ)। সমাবেশে জিপিইইউ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক ডিজিবাংলা-কে জানান, আমরা প্রায় ১৩ শ’ কর্মী সকাল ৮টা থেকে জিপি হাউজে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমরা বের হতে সক্ষম হয়েছি। ৫ শতাংশের দাবিটা আমাদেরও। বিষয়টি আদালতে থাকায় আমরা কিছু করতে পারছি না। প্রয়োজনে আমরাও আন্দোলনে যাবো।
অপরদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জাকির হোসেন ও রানা ফরাজি ঘোষণা দেয়া হয়, রবিবারের মধ্যে জিপি ম্যানেজমেন্ট বৈঠকে না বসলে পরের দিন থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি নেয়া হবে। এতে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীরা অতীতের মতো আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
এর আগে রাত ১২টার সময়ও সেখানে জিপি ম্যানেজমেন্টের দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, ৫ শতাংশ মুনাফা দিবি’, ‘গ্রামীণফোনের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ম্যানেজমেন্টের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’– ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা।
ঘটনাস্থল গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনেই অবস্থানরত ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার এইচ এম শফিকুর রহমান তিনি জানিয়েছেন, গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মীরা চাইছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। কিন্তু গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বলছে, যেহেতু তারা (আন্দোলনকারীরা) মামলা করেছে, সেগুলোর সমাধান আদালতে হবে। গ্রামীণফোনের প্রতিনিধিরা যে কারণে আর বসছেন না। এ নিয়েই ঝামেলাটা বেঁধেছে। আন্দোলনকারীরা গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়ায় সকালে প্রতিষ্ঠানটির যে কর্মীরা অফিসে এসেছিলেন, তারা রাত ১২টা পর্যন্ত অফিস থেকে বের হতে পারেননি। আন্দোলনকারীরাও তাদের অবস্থানে অনড়।

চাকুরিচ্যুত ও অধিকারবঞ্চিত গ্রামীণফোন শ্রমিক ঐক্য পরিষদে’র ব্যানারে মঙ্গলবার দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে ৩ হাজার ৩৬০ জন কর্মীকে ‘অবৈধভাবে’ চাকরিচ্যুত করেছে গ্রামীণ ফোন। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে তারা ‘বৃহত্তর কর্মসূচি’ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে এক বার্তায় বলা হয়, “গ্রামীণফোনের কিছু সাবেক কর্মী চাকরি সংক্রান্ত কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জিপি হাউজের সামনে সমবেত হচ্ছেন। আমাদের জানা মতে, তাদের বেশিরভাগ বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান এবং আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য গ্রহণ করেন। এছাড়া তারা যে দাবিগুলো তুলেছেন, সেগুলো বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি গ্রামীণফোন শ্রদ্ধাশীল। তাই আদালতে এসব বিষয়ের নিস্পত্তি হবে। দেশজুড়ে গ্রাহকদেরকে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে সংকল্পবদ্ধ গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোন শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার অধিকারের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ওই ব্যক্তিরা জিপি প্রাঙ্গণে প্রবেশ ও বহির্গমনের পথ অবৈধভাবে অবরুদ্ধ করেছে। এর ফলে আমাদের কর্মী ও গ্রাহকদের অবাধ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।”
ওই বার্তায় আরো বলা হয়, “গ্রামীণফোন দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং কর্মী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। ব্যক্তি ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিপি হাউস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”