মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির (শিফট) ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছিলো। তবে ব্যক্তি নাম ছেঁটে ফেলে এটি বাংলাদেশ নামে পরিবর্তন করে বাকি কাজ খরচ না বাড়িয়েই নির্দিষ্ট সময়েই শেষ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন নাম বাংলাদেশ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি অ্যান্ড হাইটেক পার্ক বা বিফট।
প্রকল্পের কাজ সরেজমিন দেখতে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে জেলার শিবচর প্রকল্পস্থান পরিদর্শন করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
এসময় নির্মাণাধীন ‘বাংলাদেশ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি অ্যান্ড হাইটেক পার্ক’ স্থানান্তর করা হচ্ছে—এমন সংবাদের বিষয় উড়িয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইসিটি বিভাগকে এই প্রকল্পটিসহ ২১টি প্রকল্পের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে, নির্মাণ ব্যয় কতটুকু সাশ্রয় করা যায় সেই নির্দেশ দিয়েছিল। সে অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটি প্রতিবেদনে টাকা সাশ্রয়ের কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সরেজমিন প্রকল্পগুলো আবারও পরিদর্শন করতে চাই এবং আজকে কুতুবপুরে নির্মাণাধীন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করতে এসে দেখলাম এই এলাকায় কোনো পাবলিক ইউনিভার্সিটি নেই। এটি ঢাকার খুবই কাছের একটি এলাকা। এমন একটি প্রতিষ্ঠান এই অঞ্চলে থাকাটা জরুরি বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখন যে বিষয়টি দেখছি, এখানে এর কার্যকারিতা কতটুকু! পরিষ্কার করে বলতে গেলে, এই এলাকার জনগণের উপকারে আসবে কিনা। উপযোগিতা কতটুকু রয়েছে। এই জিনিসগুলো যখন আমরা প্রমাণ পাই, তখন কার্যক্রমগুলো শুরু করে থাকি। তাছাড়া বিগত সরকারের সময়ই এই কার্যক্রমগুলোর মধ্যে ভবন নির্মাণের চুক্তি, জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজটি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। বিলের বিষয়ে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে। প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে পেমেন্ট সেটেল করা হবে।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের ঠিকা চুক্তি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। আমাদের একটি কমিটি ছিল, যে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আজকে আমরা সরেজমিনে এখানে এসেছি। এরপর আমাদের একটা পিএসসি (প্রজেক্ট ইস্টেয়ারিং কমিটি) মিটিং হবে। এ মিটিংয়ের এর পরেই আমরা ‘গো অন’ বলে দেব। তাছাড়া এই টেকনোলজির কাজ চলমান রয়েছে।
শীষ হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, ফরমালি বলতে গেলে, মিটিং শেষে আরেক সপ্তাহ পরেই আমরা বলতে পারবো কাজ শুরুর বিষয়টি।
সরকারি একটা নিয়ম নীতি রয়েছে। এরমধ্যে পিআইসি এবং পিএসসির মিটিংগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এর প্রতিনিধিরা রয়েছে। মিটিংয়ে তাদের কাছে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়। এরপর সার্বিক মতামতের ভিত্তিতে সুযোগ্য উপদেষ্টা মহোদয় অনুমোদন দিলে আমরা আনুষ্ঠানিক কাজ শুরুর কথাগুলো বলতে পারি। আর অনানুষ্ঠানিকভাবে বলতে গেলে প্রকল্প এখানেই হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্প শিবচর থেকে পূর্বাচল চলে যাচ্ছে এমন কথা আমার তরফ থেকে বা আমার ডিভিশন থেকে বলা হয়নি। পূর্বাচলে আমাদের একটি আইসিটি ভবনের জন্য জায়গা নির্ধারিত রয়েছে। এই প্রকল্প এখান থেকে পূর্বাচলে যেতে হলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, যা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং প্রকল্প সরানোর সুযোগ নেই। এখান থেকে প্রকল্প সরাতে হলে এই পরিমাণ জমি বা এর অর্ধেক জমিও লাগবে, যা পূর্বাচলে নেই। অর্থাৎ এটা শিফট হয়ে পূর্বাচলে যাবে এমন সম্ভাবনা নেই।

এ সময় প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সৈয়দ ইরতিজা আহসান বলেন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক‘ প্রকল্পের জন্য মোট এক হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯৩০ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকি ৬০০ কোটি টাকার এখনও দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। যে টাকার দপত্র আহ্বান করা হয়েছে তার মধ্যে থেকে যে কাজ হয়েছে সে কাজের বিল পরিশোধ বাবদ ২৪৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।
এসময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপক, অতিরিক্ত সচিব একেএম এনামুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক মো. ইরতিজা, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ হাবিবুল আলম, মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিক, শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাইখা সুলতানা প্রমুখ।