দেশের সাইবার পরিস্থিতিতে নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় আর সচেতনতা গড়ে তুলতে উদযাপিত সাইবার হ্যাকাথন ও কুইজ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করলো সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ)। ন্যাশনাল কমিটি অব সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস (এনসিসিএ) এর আয়োজনে রবিবার রাজধানীর ধানমিন্ডিস্থ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান।
সইবার কুইজ পর্বে বিজয়ী প্রথম তাসমিন মুস্তারি, দ্বিতীয় তামিম এবং তৃতীয় মেজবাহুল বাহার ও শহীদুল ইসলাম এবং হ্যাকাথন চ্যাম্পিয়ন আবরার ফাইয়্যাজ, মোমমিনুল ইসলাম হিমেল ও তাসনিম কবির সাদির হাতে পুরস্কারের ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয় অনুষ্ঠানে।
এর আগে সাইবার আড্ডায় প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, দেশে ডিজিটাল উন্নয়ন হলেও এর সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর। একইসঙ্গে নাকাল অবস্থা সাইবার সচেতনতা কর্মসূচিতেও। এক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরিতেও গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। তারা প্রশ্ন তোলোন এখন সবাই মোবাইল চালান। কিন্তু এদের কয়জনের আইটি লিটারেসি আছে? সাইবার সুরক্ষায় দক্ষতা উন্নয়কে খরচকে কি সত্যিকারের বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হয়? মানবসম্পদে কেন পিছিয়ে থাকা হচ্ছে?
বক্তব্যে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে কথা বলার জন্য কোনো অপরাধ হবে না। কোনো মামলা হবে না। সাইবার ক্রাইম হবে হ্যাকিং এর মতো অপরাধে। এক্ষেত্রে শাস্তিতেও কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। আর্থিক দণ্ডও হবে বেশি।
ফরমাল ১৫টি খাতেই সাইবার সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে যেমন সচেনতা গড়তে হবে। গতকালও এর প্রয়োজনীয়তা ছিলো। নিয়ত পরিবর্তনশীল হওয়ায় আগামী কালেও সচেতনতার প্রয়োজন হবে। এ জন্য আমরা এবার আমরা ৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে অনলাইন হ্যাকাথন করেছি। এরমধ্যে নির্বাচিত হয়েছে ৩০টি। এদের নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে এমআইএসটিতে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা হবে।
এসময় মাত্র তিন জনের ওপর দেশের ১২ কোটি মানুষের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি অক্ষেপের সঙ্গে তুলে ধরেন সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব। কুঁড়ে ঘরের ওপর ১০ তলা বিল্ডিং বানালে কি চলবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমি আসলে এখন উল্টো ডায়মেনশনে হাঁটছি। গুমের নাটকের মাধ্যমে সাইবার দুনিয়াকে আমরা ভালনারেবল করেছি বেশি। ২০১৮ সালে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন হওয়ার পরে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম এখানে আমি মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেই। এর আগের ৫ বছর ছিলো অতিরিক্ত দায়িত্বে। এই দুই বছরে এখানে আছেন ২ জন পরিচালক। আজ পর্যন্ত তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমি পাইনি। আমার একজন সিস্টেম অ্যানালিস্ট আছে একজন প্রোগ্রামার ও অ্যাসিটেন্ট প্রোগ্রামার আছে। তাদের ওপরই সাইবার, ডাটা সব সুরক্ষার দায়িত্ব। একই অবস্থা জন্ম নিবন্ধনে। ওখানেও সাকুল্যে তিন জন আইটি প্রফেশনাল। একজন প্রোগ্রামার। একজন কনসালটেন্ট প্রোগ্রামার। এবং আরেকজ অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রামার। কনসালটেন্ট সবসময় থাকেন না। তাহলে ২ জন মানুষের ওপর ১২ কোটি মানুষের ডাটা সুরক্ষা কতটা যৌক্তিক বলে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
বক্তব্যে স্মার্ট টেকনোলজিস এর সুরঞ্জন কৃষ্ণ চক্রবর্তী বললেন, ৩৯, ২৬ ও ৮২। এগুলো নিছক কোনো সংখ্যা নয়। প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে বিশ্বে একটি সাইবার হামলা হয়। ওয়েবসাইটের ২৬ শতাংশ ওয়েবসাইট প্রতিমাসে কমপ্রোইজড হয়। মানবিক ভুলের কারণে ৮২ শতাংশ কারণে ম্যালওয়্যার আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। তাই পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা বিষয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
অর্থনীতিবিদ ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকার এবং সরকারী কর্মীদেরও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অধস্তনদের দিয়ে কাজ না করিয়ে নিজেকেই স্পর্শকাতর দায়িত্ব পালন করতে হবে। কখনোই তাদের কাছে নিজের পাসওয়ার্ড দেয়া যাবে না।
ডি-নেট নির্বাহী পরিচালক এম শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে ডিজিটাল অবকাঠামোর সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর। এরওপর এখনো আমরা অনেকেই ডেটা লিক ও ব্রিচ ঠিকভাবে বুঝি না। তাই প্রবলেম সলভিংয়ের আগে এসব বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা সবচেয়ে বেশি জরুরী।
সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে সংগঠনের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের, আহসানিয়া মিশন ইনস্টিটিউটের সম্মানিত অধ্যাপক শায়েখ মুহাঃ উছমান গণি, গবেষণা সহকারী মুহম্মাদ আল আমিন, অর্থ সম্পাদক মোমিনুর ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাইবার সচেতনতা গড়ে তুলতে শিশু থেকে পেশাদার পর্যায়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অক্টবর মাস জুড়ে সাইবার অ্যাওয়ারনেস মান্থ (ক্যাম) উদযাপন করে সিক্যাফ। গত ২১ সেপ্টেম্বর কুইজ দিয়ে শুরু করে ১৯ অক্টেবারের হ্যাকাথন দিয়ে শেষ হয় মাসজুড়ে চলা সচেতনতা গড়ে তোলার বিশেষ উদ্যোগ। অনুষ্ঠিত হয়েছে নিরাপদ ইন্টারনেট গল্প, ডাটা সুরক্ষা, অনলাইন স্ক্যাম, সাইবার বুলিং, সাইবার স্মার্ট, ডিজিটাল ফরেনসিক প্রশিক্ষণ ও চ্যাম্পিয়ন সম্মিলন ও সাইবার বিতর্কের মতো ফ্লাগশিপ সচেতনতা কর্মসূচি।