ভারতে তৃতীয় ‘ভয়েস অফ দ্য গ্লোবাল সাউথ’ সম্মেলনে শনিবার ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার পর এটাই অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম বৈশ্বিক অনুষ্ঠান।
অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এরা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। তারা আলাদা। তারা একটি নতুন বিশ্ব গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি আরো বলেন, ‘তরুণ শিক্ষার্থী ও শিশুরা দোকান থেকে তাদের জন্য রং ও ব্রাশ কিনে নিয়ে আসে। তারা তাদের নিজস্ব বিষয় এবং নিজস্ব বার্তা ফুটিয়ে তোলে। তারা যেসব বার্তাসহ গ্রাফিতি আঁকছে, তা যে কাউকে শিহরিত করবে। তরুণরা স্বপ্ন দেখছে, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সব মানুষই সৃজনশীল জীব হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তারা স্বভাবজাত উদ্যোক্তা। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে শুধু চাকরিপ্রার্থী তৈরি ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য।’
তিনি মনে করেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে। তিনি আশা করেন, তারা গ্লোবাল সাউথে একসঙ্গে এটি করতে পারে। এটি দারুণভাবে সৃজনশীল তরুণ জনগোষ্ঠীসমৃদ্ধ।
নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে রূপান্তর নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন তাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করা।
ইতিহাস উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশি ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিল। এটি সারা বিশ্বে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রায় সাত দশক পরে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় বিপ্লব গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মর্যাদা, সমতা এবং অংশীদারত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপন করতে গ্লোবাল সাউথ জুড়ে যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি সবচেয়ে বয়স্ক ‘তরুণ’ হিসেবে এই বিপ্লবে অংশ নিতে পেরে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। তাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।’
উদ্বোধনী অধিবেশনটি ছিলো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ের এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটি সঞ্চালনা করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টা শীর্ষ সম্মেলনে ঢাকা থেকে যোগ দেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।