অতীতের শক্তিতে ভবিষ্যত বিনির্মাণের শপথে প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। প্রযুক্তির পথে বাংলাদেশের স্বপ্ন ও সাফল্যের পথিকৃৎ হিসেব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা থেকে বর্তমান সভাপতিতের সম্মাননা জানানো মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার গ্রীনভিল আউটডোরস, মাদানি এভিনিউ-তে সাফল্যের কেতন উড়ানো হলো শনিবার সন্ধ্যায়।
জমকালো অনুষ্ঠানে গান-নৃত্যে রজত জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে বেসিস প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ তৌহিদ, সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, এ কে এম ফাহিম মাশরুর, শামীম আহসান ও মোস্তাফা জব্বারের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। সম্মননায় ভূষিত হন বেসিস সাবেক সভাপতি এসএম কামাল, রফিকুল ইসলাম রাউলি, মাহবুব জামান ও সৈয়দ আলমাস কবিরও।
অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনরি, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ধর্মপালা বিরাক্কডি, মার্কিন দূতাবাস প্রতিনিধি, কোটরা প্রতিনিধি, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন প্রতিনিধি এবং সহস্রাধিক বেসিস সদস্যসহ সতীর্থ বাণিজ্যিক সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
তাদের উপস্থিতিতেই বাঁশ, বাটি-চামচ দিয়ে দারুণ যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। যন্ত্রীদের সঙ্গে যুক্ত হন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকও।
অনুষ্ঠানে বেসিসের ২৫ হাজার সদস্য আইসিটি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করতে সক্ষম হবে প্রত্যাশা করে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অবশ্যই আমরা ২০২৪ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত আইটি ও আইটিইএস খাত যেনো কর্পোরেট করমুক্ত থাকে সে জন্য আপনাদের সঙ্গে মিলে এক সঙ্গে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেমন আপনাদের প্রত্যাশা রয়েছে, তেমনি বেসিস এর কাছে আমাদের প্রত্যাশা আগামী ৫ বছরে আপনারা যেনো ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করতে পারেন। আজ আইটি ও আইটিইস খাত থেকে তিন লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে তা আমরা ১০ লাখে উন্নীত করতে চাই। একই সঙ্গে একই সময়ের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে চাই।
‘আইসিটি, টেলিকম ও বেসিস, আমরা কেউই কিন্তু আলাদা কোন পক্ষ নয়; আমরা সবাই বন্ধু ও সহযোদ্ধার মতো একটা টিম হয়ে গত ১৫ বছর কাজ করছি। আমাদের সফটওয়্যার শিল্প ও উদ্যোক্তা সংস্কৃতির বিকাশে সরকার পক্ষ থেকে যেসকল নীতিগত সহযোগীতা দেওয়া হয়েছিলো তা আগামীতেও অব্যাহত রাখবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার’- যোগ করেন পলক।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেসিসের ২৫০০ আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানে কয়েক লক্ষ তরুণের কর্মসংস্থান তৈরি এবং আইসিটি খাতে ১.৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়েও নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসিস। এখন আমাদের আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার সময়।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ উদযাপনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চেয়ে বলেছেন, “আমরা সকলের সাথে এই উদযাপনের আনন্দ ভাগ করে নিতে চাই এবং বেসিসের এই মাইলফলক ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দীর্ঘ ও অবিচল যাত্রার প্রতিফলন, উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা, এবং সাহসিকতার গল্প। বেসিস তার সদস্যদের ক্ষমতায়নে এবং বিশ্বমানের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা সরবরাহে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আমরা গর্বিত যে, আমাদের সংগঠন স্থানীয় সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবাগুলির মানোন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ, এবং ডিজিটাল উন্নয়নের প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পেরেছে। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পরে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আর এক্ষেত্রে আইসিটি হল স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশনের নিউক্লিয়াস। কৃষি খাত, উৎপাদন খাত, ব্যবসা থেকে শুরু করে শিক্ষা, এই সকল সেক্টরকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট হওয়ার জন্য সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”
দেশে গতিশীল সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে, ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৮টি চার্টার সদস্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে বেসিস-এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বেসিস এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫০০। এই অসামান্য যাত্রাপথে, বিগত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি ও আইটি পরিষেবা খাতের অগ্রগতি ও উন্নয়নে বেসিস অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। বেসিস তার সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশে সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা শিল্পের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ, মূলধন যোগানে সহায়তা, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মী উন্নয়ন, ব্যবসা-বান্ধব সরকারি নীতিমালা তৈরিতে পরামর্শক এবং প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতিতে অবদান রাখতে নিরলশভাবে কাজ করে যাচ্ছে।