মুক্তির অপেক্ষায় থাকা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ভিডিও গেম ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো’র ছয় নম্বর সিজনের (জিটিএ- ৬) ক্লিপ ফাঁসে জড়িত ১৮ বছর বয়সী হ্যাকার অক্সফোর্ডের বাসিন্দা এবং হ্যাকার গ্রুপ ল্যাপসাসের অন্যতম সদস্য অ্যারিয়ন কুরটাজ-কে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতালে বসবাস করার আদেশ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত।
প্রসঙ্গত, কুরটাজ ছাড়াও হ্যাকারগোষ্ঠী ল্যাপসাসের ১৭ বছর বয়সী আরেক সদস্যও একই বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাকে ১৮ মাসের জন্য একটি পুনর্বাসনকেন্দ্রে থাকার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সে কঠোর নজরদারী ও ভিপিএন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা। কুরতাজ ও ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরই ল্যাপসাস গোষ্ঠীর প্রথম সদস্য, যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা ওই রায়ে বিচারক বলেছেন, সাইবার অপরাধ ঘটাতে কুরটাজের ভালো দক্ষতা ও ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে। ফলে তিনি জনসাধারণের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। কুরটাজ অটিজমেও আক্রান্ত। তাই জিটিএ- ৬ এর ক্লিপ ফাঁস করায় ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতালে থাকতে হবে। তবে চিকিৎসকরা যদি মনে করেন কুরটাজ শুধরে গেছেন ও সমাজের জন্য হুমকি নন, তখন ছাড়া পাবেন।
কিন্তু আদালত এরই মধ্যে জানতে পেরেছেন যে হেফাজতে থাকা অবস্থাতেও কুরটাজ উচ্ছৃঙ্খল ও হিংস্র আচরণ করেছেন। রায়ের শুনানির অংশ হিসেবে কুরটাজের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারও সাইবার অপরাধের দুনিয়ায় ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ও হ্যাকিং চালিয়ে যেতে অতিমাত্রায় আগ্রহী।
আদালতের জুরি বোর্ডকে জানানো হয়েছে, এনভিডিয়া ও বিটি/ইই হ্যাকের দায়ে কুরটাজ যখন জামিনে পুলিশি নিরাপত্তায় একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন, তখনো হ্যাকিং চালিয়ে গেছেন। আর ওই সময়েই তিনি জিটিএ- ৬ এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রকস্টারের ওয়েবসাইট হ্যাক করেন।
সম্প্রতি উবার, এনভিডিয়া ও রকস্টার গেমস এর মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার হামলা করে গ্রুপটি। এতে এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়ে। ভয়াবহ বিষয় হলো, জিটিএ- ৬ হ্যাকের সময় কুরটাজের ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত অবস্থায় থাকলেও অ্যামাজন ফায়ারস্টিক, হোটেলের টেলিভিশন ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তিনি রকস্টার হ্যাক করতে সক্ষম হন। তার পরপরই কুরটাজ বহুল প্রত্যাশিত ও মুক্তির অপেক্ষায় থাকা জিটিএ- ৬ ভিডিও গেমের ৯০টি ক্লিপ চুরি করেন। এমনকি, রকস্টারের অভ্যন্তরীণ ম্যাসেজিং সিস্টেমে প্রবেশ করে কুরটাজ ঘোষণা করেন, যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রকস্টার কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে টেলিগ্রামে যোগাযোগ না করে, তাহলে তিনি আরও দামি তথ্য ফাঁস করতে শুরু করবেন।
একপর্যায়ে ‘টিপটউবারহ্যাকার’শীর্ষক ইউজারনেম ব্যবহার করে একটি অনলাইন ফোরামে জিটিএ- ৬এর ওইসব ক্লিপ ও সোর্স কোর্ড প্রকাশ করে দেন কুরটাজ। এ ঘটনার পর তাকে ফের আটক করা হয়। রকস্টার গেমস আদালতকে জানিয়েছে, ওই হ্যাকের কারণে তাদের ৫০ লাখ ডলার ও কর্মীদের বাড়তি কয়েক হাজার ঘণ্টার ক্ষতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, হ্যাকারদল ল্যাপসাসের সদস্যরা বেশিরভাগই কিশোর-কিশোরী। ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালানোয় গোষ্ঠীটিকে ব্রাজিলের একটি আদালত ‘ডিজিটাল দস্যু’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।