প্রতিবছর বিশ্ব মুসলিমের অনিন্দ্য এক অনন্য সম্মিলনের অপূর্ব নিদর্শন ফুটে ওঠে পূণ্যভূমি মক্কা-মদীনায়। মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করে হজ সম্পন্ন করেন হাজীরা। ১৬০টি দেশ থেকে এবারের হজ্জে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক আল্লাহর মেহমান। ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই সমাবেশে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বের সকল প্রান্তের শত কোটি মুসলিম। হজ্জের আত্মিক বন্ধনে লাব্বায়েক ধ্বনি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে কণ্ঠে কণ্ঠে।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন রচনা করেছে প্রযুক্তি।
হজ, ওমরাহ, মিনা লোকেটর, হজ গাইড, হজ নেভিগেটর নামে রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করছেন হাজীরা। এসব অ্যাপ থেকে জেনে নিচ্ছেন হজ-সংক্রান্ত তথ্য হজে করণীয়, নিয়মকানুন, মিনার মানচিত্র, আরাফাতের মানচিত্র, মক্কা-মদিনার মানচিত্র। মুঠোফোন দেখেও পড়ছেন দোয়া-দরুদ। এসব অ্যাপে যুক্ত থাকা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম প্রযুক্তি ব্যবহার করে মক্কা-মদিনা, মিনা ও আরাফাতের রাস্তাঘাটে চলাচল করা যাচ্ছে একাই।
মিনায় জামারা থেকে হজযাত্রীর তাঁবুর অবস্থান, তাঁবু থেকে মসজিদুল হারামে যাওয়া-আসার পথ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে ভিড় এড়াতে হেঁটে সুড়ঙ্গ (টানেল) পথ দিয়ে মসজিদুল হারামে পৌঁছার হাঁটার পথ চিনতে রয়েছে গুগল ম্যাপের প্রযুক্তি।
স্মার্ট ব্রেসলেট মাধ্যমে হজযাত্রীদের ট্র্যাকিং ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ‘নুসুক’ অ্যাপের মাধ্যমে হজ পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন হাজিরা। তাফবিজ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। হাজিদের মক্কার বাসা থেকে হজের পবিত্র স্থানগুলোতে অবস্থান এবং সেখান থেকে মসজিদুল হারামে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করছে অ্যাপটি।
তা ছাড়া হজের স্থানগুলোতে এবার হাজিদের চলাচল সহজ করতে এক হাজার ইলেকট্রিক স্কুটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় বছরের মতো পরিবহনব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে কাদানা স্টেশন থেকে মাহবাস আল-জিন টানেলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে দেশটির ট্রান্সপোর্ট জেনারেল অথরিটি (টিজিএ)। এর কাছেই অবস্থিত মসজিদুল হারামের বাব আলী স্টেশন। স্কুটার চালানো শেখাতে সেখানে রয়েছে বিশেষজ্ঞ দল। এছাড়াও প্রথম বারের মতো চালু করা হয়েছে চালকবিহীন স্মার্ট বাস।
হাজীদের নিরাপত্তায় জনবলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিক তদারকিতেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেষ আইটি বিভাগ। অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সবগুলো ধর্মীয় স্থানে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা হচ্ছে। আর যারা হজ্জে যেতে পারেননি, তারাও অন্তত চোখের দেখায় তৃপ্ত হচ্ছেন কাবা শরীফের ভার্চুয়াল ট্যুরে। এর মাধ্যমে আকাঙ্খা বাড়ে বাস্তব জীবনে অনুশীলনের। হজ্জ পালনের পাশাপাশি এর অন্যতম অনুষঙ্গ কুরবানীতেও এখন যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির সেবা। কম্পিউটার প্রযুক্তি, এসমএস-এ নিশ্চিত করা যায় পশু কোরবানি এবং তার সুষ্ঠু বন্টন।
অনলাইনে চলছে হজ্জের পুরো আনুষ্ঠানিকতার ২৪ ঘণ্টার লাইভস্ট্রিমিং। ছড়িয়ে পড়ছে মুসলিম ঐতিহ্য। অটুট হচ্ছে ঐতিহাসিক বন্ধন। কাবা থেকে ধ্বনিত তাকবির কোটি কোটি মুসলিম হৃদয়ের ধ্বনিত ‘লাব্বায়েক আল্লাহ হুম্মা লাব্বায়েক’ এর অপার্থীব দ্যুতিতে উদ্ভাসিত হয় বিশ্ব। স্রষ্ট্রার সান্নিধ্য আর পুরস্কারের প্রার্থনায় এক নির্দিষ্ট দিন ও নির্দিষ্ট স্থানে সংকল্পে শামিল আজ বিশ্ব মুসলিম।