আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও আউটসোর্সিং-এ বিশ্বের পরবর্তী গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কাছে ফ্রিল্যান্সার নির্বাচনের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এখন অমিত সম্ভাবনাময় নাম। কেননা দেশের তরুণ সমাজের বহু দক্ষ কর্মী নানান অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে চলেছে অগণিত বৈদেশিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও ক্লায়েন্টকে। বিনিয়োগকারীরাও তাদের পছন্দের তালিকায় রাখছেন বাংলাদেশের নাম। করছেন বিনিয়োগে।
তবে দক্ষ জনগোষ্ঠী ও অনুকূল কার্যপরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক লেনদেনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এদেশের পেমেন্ট ইকোসিস্টেম। শুধু ফ্রিল্যান্সারই নয়, বহু উদ্যোক্তা- যারা কাজ করছেন বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের সাথে, তাদের মতেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বহু রাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশের পেমেন্ট সিস্টেমে পরিলক্ষিত হয় কঠোর নিয়ম কানুন, অতিরিক্ত মানি ট্রান্সফার ফি ও রপ্তানি কোটা; যা আন্তর্জাতিক লেনদেনকে করে তুলছে ভঙ্গুর। ভবিষ্যৎ লেনদেনের পথও হচ্ছে বাধাগ্রস্ত।
আপাতদৃষ্টিতে এ সকল বিষয়াবলিকে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট প্রাপ্তির মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও আড়ালে থেকে যায় সকলের সচেতনতার অভাব ও পেমেন্ট সম্পর্কিত আইনি নীতিমালা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার বিষয়টি। তাই সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (৩ মে) রাজধানীর একটি সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিরাজমান অন্তরায় নিয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় এমন অভিমতই তুলে ধরেন বক্তারা। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য “দ্য চ্যালেঞ্জেস অফ একসেপ্টিং ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টসঃ হাউ টু বিল্ড আ সাসটেইনেবল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম ফর গ্লোবাল গ্রোথ” শীর্ষক দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে দেশের বিপিও/আউটসোর্সিং শিল্পের জন্য নিবেদিত বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)।
কর্মশালায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে পেমেন্ট সিস্টেমের সম্ভাব্য টেকসই সমাধান নিরূপনের কৌশল হাতে কলমে তুলে ধরেন ‘ডায়াল টু সাপোর্ট’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। এসময় জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে ‘পেয়োনিয়ার’-এর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজনে সার্বিক সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন “বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল (বিপিসি)”।
বাক্কোর ৪৫টি সদস্য প্রতিষ্ঠান হতে ৫২ জন প্রশিক্ষণার্থী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় বাক্কো অর্থ সম্পাদক জনাব মোঃ আমিনুল হক তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, “আউটসোর্সিংই পারে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রসমূহে বাংলাদেশের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে, যার জন্য প্রয়োজন পেমেন্ট আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সকল বাধা জরুরী ভিত্তিতে নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস অনেকেরই অনেক সমস্যার সমাধান তুলে ধরে পেমেন্ট প্রসেসকে করে তুলবে সহজতর।”
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাক্কো পরিচালক মোঃ মুসনাদ ই আহমেদ এবং আইবিপিসির নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফয়সাল খান। কর্মশালায় প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারী সকল প্রশিক্ষণার্থীদের সনদপত্র প্রদান করা হয়।