আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি তার পছন্দের যে কোন গ্যাজেটে প্রবেশাধিকার পাবেন- কিন্তু যখন ভোক্তা প্রযুক্তির কথা আসে, তখন জো বাইডেন খুবই হতাশ হতে পারেন। কেননা, তিনি যেসব স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করেন সেগুলো হ্যাকিং ঝুঁকি রয়েছে। আর সেজন্য এসব ডিভাইস, অর্থাৎ তার ব্যবহৃত আইফোন, আইপ্যাড, আইওয়াচ এবং বিশেষ করে পেলটন এক্সারসাইজ বাইক নিয়ে উদ্বিগ্ন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রয়োজনে তারা ডিভাইসের হার্ডওয়্যার মডিফাই করতে পারেন। কিন্তু সফটওয়্যার বা ক্লাউডের নিরাপত্তা কতটা অটুট রাখা যাবে সেটাই দুশ্চিন্তা বিষয়।
কেননা মার্কিন প্রেসিডেন্টের চারপাশের ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হ্যাকিং লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। বিশেষ করে গত বছরের শেষ দিকে রাশিয়ান হ্যাকারদের কবলে পড়ার পর বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি। ওই সময় মার্কিন সরকারের নেটওয়ার্ক সন্দেহভাজন রাশিয়ান হ্যাকারদের মাধ্যমে কম্প্রমাইজ করা হয়েছিলো।
ব্যক্তি জীবনে স্মার্ট গ্যাজেটে অনুরক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অ্যাপলের পাঁড় ভক্ত তিনি। তিনি একাধানে আইফোন, আইপ্যাড, আইওয়াচ এবং অ্যাপল নিউজ অ্যাপ ব্যবহার করেন। এছাড়াও পেলটন এক্সারসাইজ বাইক তার প্রতিদিনের সঙ্গী।
২০০০ সালের আগে অবশ্য এটা এত বড় সমস্যা ছিল না। তখন একমাত্র ব্যক্তিগত ডিভাইস অর্থাৎ কম্পিউটার এবং নন-স্মার্ট মোবাইল ফোন হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি ছিলো।
তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কেন একটা মোবাইল লাগবে এমন চিন্তাটাই বলবৎ ছিলো। কেননা, তিনি তো হোয়াইট হাউজ থেকে বিশ্বের যে কারো সাথে নিরাপদ লাইনে কথা বলতে পারতেন।
কিন্তু ২০০৯ সালে বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার পর সব কিছু বদলে যায়।
ব্ল্যাকবেরির প্রতি ওবামা এতটাই আসক্ত ছিলেন যে, নিজের মোবাইলে ফোনের জন্য নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সাথে কয়েক সপ্তাহ ধরে লড়াই করেছেন তিনি।-অবশেষে তিনি একটি সমঝোতার মাধ্যমে জিতেছেন। সমঝোতাটি ছিলো ওই ফোনের মাধ্য মাধ্যমে তিনি উর্ধ্বতন কর্মচারী এবং ব্যক্তিগত বন্ধুদের একটি ছোট দলের সাথে যোগাযোগ রাখার সুযোগ পাবেন।
এবং তারপর থেকে, একজন প্রেসিডেন্ট যে প্রযুক্তি ডিভাইস ব্যবহার করতে চান তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে আর নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিদ্রাহীন রাত কাটাতে হয়েছে।
যখন আইপ্যাড বের হয়, ২০১০ সালে। যথারীতি প্রেসিডেন্ট ওবামা সেটি চেয়েছিলেন।
তাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা নিরপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই ‘ওবামাপ্যাড’ তৈরি করিয়েছেন। একইসঙ্গে স্টাফদের জন্য এর প্রতিলিপিও তৈরি করা হয় বলে জানিয়েছেন ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাইবার নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরি শোয়ার্টজ।
তার ভাষ্যমতে, ওবামার জন্য হোয়াইট হাউজে ওয়াই ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু একসময় পরিবারের কাছে এটা বেমানান হয়ে ওঠে।
আর ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি তার মেয়াদকালে টুইটারের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন, তিনি একটি ব্যক্তিগত ডিভাইস ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছিলেন। শোনা যায়, সেসময় বেশ কিছু “বার্নার” ফোন ব্যবহার করা হতো এবং তারপর নিরাপত্তার কারণে সেগুলো প্রতিস্থাপিত হয়।
কিন্তু অধিকাংশ যোগাযোগের জন্য কাগজের চেয়ে তিনি ব্যাপকভাবে কম্পিউটার এবং ইমেইল পছন্দ করতেন।
আর এখন তো ইন্টারনেট অব থিংকসের সময়। তাই যদি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে আইপ্যাড দেয়া হয়ে তাহলে তাহলে হোয়াইট হাউজেন প্রযুক্তি নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের কেবল নির্ঘুম রাতই কাটবে না, দুঃস্বপ্নের ভয়ে থাকতে হবে।
কেননা, তিনি অ্যাপল ওয়াচ যেমন পড়েন তেমনি ব্যবহার করেন প্যালেটন এক্সারসাইজ বাইক। যেই বাইকে রয়েছে ইন্টারনেটে সংযুক্ত কম্পিউটার স্ক্রিন, ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন। নিরাপত্তার কারণে এর হার্ডওয়্যারগুলোকে তাই মোডিফাই করতে হতে পারে। প্রয়োজনে ডিভাইসটি থেকে ক্যামেরা বাদ দিতে পারেন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা।
এদিকে বাইডেনের জীবনীকার ইভান ওসনস জানিয়েছেন, তিনি অ্যাপল নিউজ অ্যাপ ব্যবহার করেন। এটাও সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। কেননা হার্ডওয়্যারকে সুরক্ষা দেয়া গেলেও সফটওয়্যারকে নিরাপদ রাখা দুস্কর।