মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স মন্ত্রণালয় থেকে ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা আছে। সেই হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে দুই হাজার ১১১ জন বাদ যাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এছাড়াও যেসকল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তারা যদি স্বেচ্ছায় এসে তা স্বীকার করেন, তাহলে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমার আভাস দিয়ছেন তিনি। নয়তো প্রতারণার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন উপদেষ্টা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) নিজ মন্ত্রণালয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্ক বার্তা দেন মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘বহু অভিযোগ আছে। অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং সব সুযোগ–সুবিধা নিয়েছেন। এটা জাতির সাথে প্রতারণা। আদালত নির্ণয়ের পর এদের সাজার ব্যবস্থা করা হবে। এদের শাস্তি পাওয়া উচিত। নানা রকমের তালিকা এখানে আছে। একটু সময় তো লাগবেই। আমাদের চেষ্টা থাকবে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়। তবে তাদের একটি সুযোগ দিতে ইমডেমনিটি দেওয়া হতে পারে। তারা যদি স্বেচ্ছায় চলে যান তাহলে সাধারণ ক্ষমতা পেতে পারেন। না হলে তাদের অভিযুক্ত করা হবে।’
মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অভিযোগ ফরম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে সব মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সর্বমোট সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৩৫ জন। আর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ৫৬০ জন।
উপদেষ্টা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে ভাতাপ্রাপ্ত মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা ৪৬৪ জন। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৮৯৫ জন, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৩৩৩ জন এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩৬৮ জন। সব মিলিয়ে মোট ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ আট হাজার ৫০ জন।
উপদেষ্টা বলেন, অভিযোগ আছে যে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান না হয়েও সরকারি চাকরি নিয়েছেন এবং নানা রকমের সুবিধা নিচ্ছেন। আমরা এটাকে যখন পাবলিক ডোমেইনে নিয়ে যাচ্ছি তখন এখানে একটা ফরম দিচ্ছি। এই ফরমের মাধ্যমে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজাকারের তালিকা কবে নাগাদ করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক ই আজম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। মন্ত্রণালয়ে এ ব্যাপারে কোনো ফাইল আমি পাইনি। রাজাকারের তালিকার কোনো কপি, কোনো বৃত্তান্ত নথি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে নাই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, রাজাকারের তালিকা করতে চাইলেও করা যাবে না। এটা অত্যন্ত কঠিন বিষয়, বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যাবে না। কে কোথায় আছে, সেটা বের করা অনেক দুরূহ কাজ। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে গিয়েই মন্ত্রণালয় হিমশিম খাচ্ছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।