মহাবিশ্ব তৈরির রহস্য খুঁজতে ইউক্লিড নামের ইউরোপীয় একটি টেলিস্কোপ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে স্পেস এক্স। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি নিখুঁত ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি ম্যাপ তৈরি করতে মহাকাশে পাঠানো হয় এই টেলিস্কোপটি। ধারণা করা হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা এই ম্যাপের সাহায্যে কথিত ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করবেন।
স্পেস এক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেশনের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে শনিবার (১ জুলাই) থেকে এটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। ইউক্লিড টেলিস্কোপটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৪০ কোটি ইউরো। টেলিস্কোপটি অবস্থান করবে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছাতে এর সময় লাগবে এক মাসের মতো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর সাহায্যে ফিরে যাওয়া যাবে মহাবিশ্বের এক হাজার বছর আগের ইতিহাসে। পৃথিবীর পাশাপাশি এটি সূর্যের চারদিকেও একই গতিতে প্রদক্ষিণ করবে।
প্রাথমিকভাবে এটি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসার প্রকল্প হলেও এ মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসারও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বিশেষ করে, টেলিস্কোপটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশলগত বিষয়ে।
এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইসোবেল হুক বলেছেন, এ মিশন অনেকটা কোথায় স্থলভূমি আছে তা জানার আগে জাহাজে করে যাত্রা করার মতো। এই গবেষণা থেকে জানার চেষ্টা করবো যে আমরা এ মহাবিশ্বের কোথায় অবস্থান করছি, কীভাবে আজকের পর্যায়ে এসেছি ও বিগ ব্যাং মুহূর্তের পর থেকে কীভাবে অপরূপ সব গ্যালাক্সি তৈরি হলো, কীভাবে তৈরি হলো সৌরজগত এবং জন্ম হলো প্রাণের। তাই ইউক্লিড মিশন থেকে যা কিছু জানা যাবে সেগুলো এই মহাবিশ্বকে বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে।
আর ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মহাকাশ গবেষণা ল্যাবরেটরির অধ্যাপক মার্ক ক্রপার বলেছেন, এই ক্যামেরা যে ছবি তুলবে সেটা হবে বিশাল। এটির তোলা একটি মাত্র ছবি দেখতেই ৩০০টির বেশি হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশনের প্রয়োজন হবে।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, আগে পরিচালিত গবেষণা থেকে ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বে যতো শক্তি আছে তার ৭০ শতাংশ ডার্ক এনার্জি। প্রায় ২৫ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার। বাকি পাঁচ শতাংশ নক্ষত্র, তারকা, গ্যাস, ধুলোবালি, গ্রহ ও আমাদের মতো দৃশ্যমান বস্তু। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্যময় এই ৯৫ শতাংশ জগত সম্পর্কে ধারণা পেতেই ইউক্লিড টেলিস্কোপ ছয় বছর ধরে দুটি গবেষণা চালাবে। এর মধ্যে প্রধান কাজ হবে ডার্ক ম্যাটার কোথায় কীভাবে রয়েছে, তার একটি মানচিত্র তৈরি করা।
প্রসঙ্গত, আকাশের মাত্র দুই বর্গ ডিগ্রি এলাকাজুড়ে প্রথমবারের মতো এই কাজটা করে আলোচিত হয়েছিল। হাবল স্পেস টেলিস্কোপএখন ইউক্লিড টেলিস্কোপ এই কাজটা করবে আকাশের ১৫ হাজার বর্গ ডিগ্রি এলাকাজুড়ে। টেলিস্কোপের যে ভিআইএস ক্যামেরা দিয়ে এ কাজ করা হবে, সেটা যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে তৈরি।